তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন তুলসী পাতা সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্পূন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান পেয়ে যাবেন।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মধ্যে শুধু তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়া ও তুলসী পাতা সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক তুলসী পাতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আরো নানান তথ্য সম্পর্কে।

ভূমিকা-তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর বিশেষ গুণ সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই জানি। এছাড়াও এটি একটি অ্যান্টিভাইরাস হিসাবে ও বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। এটা একটি সুগন্ধযুক্ত চিরহরিৎ উদ্ভিদ। ভেষজ গুনে ভরপুর এই তুলসী পাতা আমাদের খুব উপকারে আসে। এই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানি দূষণমুক্ত হয় এবং কাশি ও কৃমি দূর করে। 

এছাড়া এই পাতা নিয়মিত নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম পাওয়া যায়। তুলসীর বীজ ভিজিয়ে রেখে সে পানি প্রতিদিন সকালে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড় ও কমে। হাম, বসন্ত এগুলোর দাগ তুলতে তুলসীর রস বেশ উপকারী। এছাড়াও পোকামাকড় কামড়ে ক্ষতস্থান এবং ব্যথা সারাতে ও তুলসী পাতা বেশ উপকারী। 
শরীরের ওজন কমাতে তুলসী পাতা সাহায্য করে। ভেষজগুনে গুণান্বিত তুলসী পাতা যেন প্রকৃতি ও মানুষের জন্য এক অনন্য উপাদান।

তুলসী গাছের পুষ্টিগুণ

তুলসী গাছ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং উপকারিতা প্রদান করে। এই পাতা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি , ভিটামিন কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো বিভিন্ন খনিজ গুলির ভালো একটি উৎস। এছাড়াও এতে ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তুলসী পাতায় এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, 

এন্টি ভাইরাল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ও রয়েছে। তাইতো এই পাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। তুলসী পাতা রক্তের ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী হলো একটু ভেষজ উদ্ভিদ। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী একটি উদ্ভিদ। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতা গুলোঃ
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
  • তুলসী পাতার রস এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বাচ্চাদের বেশ উপকার হয়।বিশেষ করে যে সকল বাচ্চারা পেট কামড়ানো, কাশি ও লিভারের সমস্যায় ভুগছে।
  • ম্যালেরিয়া রোগীদের জন্য ও তুলসীর পাতা ও এর শিকড়ের ক্বাথ খুব উপকারী। প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতার রস গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলে এটা ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। কয়েকদিন নিয়মিত এটা খেলে ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • যারা বসন্ত, হাম, ফোঁড়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তুলসীপাতার রস বেশ উপকারী। ফোঁড়া,হাম এর পুঁজ সম্পূর্ণ বের করতে হলে তুলসী পাতার রস বেশ কার্যকরী।
  • তুলসী পাতার রস চুলকানি ও ঘামাচি রোধ করতে বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতার সাথে দুর্বা ঘাস এর ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানির মতো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ও তুলসী পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে দাদে লাগালে দাদ ভালো হয়।
  • অজীর্ণ জনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতার রস বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর ও অজীর্ণ রোগ সেরে যায়।
  • বিষাক্ত কীট পতঙ্গ তে কামড়ালে ওই স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা যন্ত্রণা কমে।
  • কৃমির সমস্যায় তুলসী পাতার রস বেশ উপকারী।
  • এতে আছে ভিটামিন সি ও এন্টি অক্সিডেন্ট, যা হার্টকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া ও এটা হার্ট এর কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যার ফলে হাট ভালো থাকে।
  • তুলসী পাতার গাছের মূল শুক্রো গাড়ো করে। তুলসী পাতার সাথে এলাচ গুড়া এবং এক তোলা মিছরি মিশিয়ে পান করলে শুক্রাণু শক্তিশালী হয়।এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন তুলসী গাছের শিকড় ১ ইঞ্চি পরিমাণ খেলে যৌন দুর্বলতা সেরে যায়।
  • বাতের ব্যথায় যারা কষ্ট পাচ্ছেন তাদের জন্য এটি খুব উপকারী। তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে বাতের ব্যথার স্থানে পট্টি দিলে বাতের ব্যথা সেরে যায়।
  • এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি এই উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে।এছাড়াও তুলসী পাতার রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সাহায্য করে।
  • তুলসী চা বেশ জনপ্রিয়। তুলসীপাতা চায়ের মতো করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়।
  • তুলসী পাতা অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এটি কিডনি ও লিভার কে মেটাবলিক ড্যামেজের হাত হতে বাচায়। যেটি রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজের কারণে হয়ে থাকে।
  • কালো তুলসী পাতার রস দূষিত রক্তকে দূষণমুক্ত করতে সাহায্য করে।
  • হাম ও বসন্তের জন্য যে সকল কালো দাগ হয় তা দূর করতে তুলসী পাতার রস বেশ উপকারী। দাগের উপরে তুলসী পাতার রস মাখলে দাগ দূর হয়ে যায় এবং গায়ের রং স্বাভাবিকে ফিরে আসে।
  • যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া রয়েছে তাদের জন্য তুলসী পাতা খুব উপকারী। তুলসীর বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ওই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মতন নিয়মিত খেলে পোস্ট প্রস্রাব জনিত জ্বালাপোড়ায় বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  • এতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা থেকে ও সারিয়ে তুলতে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।তুলসী পাতার মধ্যে যে ফাইটোক্যামিক্যাল রয়েছে তা আমাদের লাং, লিভার এবং স্কিন ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।এদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে রেডিয়েশন দেওয়া হয়, যার ফলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। আবার কারো কারো চুল উঠে যায়। রেডিয়েশনের ফলে এই ধরনের সমস্যা গুলি প্রতিরোধ করতে ও সাহায্য করে তুলসী পাতা।
  • পেট খারাপ হলে কয়েকটা তুলসী পাতা সামান্য জিরার সাথে পিষে দিনে তিনবার খেতে পারেন। এতে পেটের সমস্যা কমবে আর বারবার টয়লেটে যাওয়া ও বন্ধ হবে।
  • যাদের কাশি সহজে কমে না তারা তুলসী পাতা ও আদা একসাথে পিষে নিয়ে এতে মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত কাশি সেরে যাবে।
  • পোড়া জায়গায় তুলসীর রস এর সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে লাগালে ওই স্থানে জ্বালাপোড়া কমবে এবং ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যাবে, আর দাগও থাকবে না।
  • সকাল বেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে খাবার রুচি বাড়ে।
  • স্মরণশক্তি বাড়াতে প্রতিদিন ৫-৬ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে তুলসী পাতা খুব উপকারী।
  • বমি এবং মাথা ঘুরা দূর করতে তুলসী পাতার রসের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে উপকৃত হবেন।
  • রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে সকালে ওই পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। এতে চোখের সমস্যা দূর হবে।
  • ত্বকের জন্য ও তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতা পেস্ট করে ত্বকে লাগালে ত্বকের বলিরেখা ও ব্রণ দূর হয়। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা ও বাড়ে।
  • তুলসী পাতার রস প্রতিদিন নিয়মিত খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে। এছাড়া ও যাদের কিডনিতে পাথর আছে তারা একটানা ছয় মাস তুলসী পাতার রস পান করলে পাথর গলে গিয়ে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যাবে।
  • গরম পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে সিদ্ধ করে নিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।

তুলসী পাতার অপকারিতা

তুলসী পাতা আমাদের খাওয়া খুবই উপকারী। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিও করে থাকে। তাই বুঝে শুনে এবং পরিমাণ মতো তুলসী পাতা খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসী পাতা খাওয়া ক্ষতিকর।গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্য দান কালে তুলসী পাতা খাওয়া ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে এ সময় নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। 
তাই এই সময় তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া নারীদের জন্য বন্ধাত্বের কারণ হতে পারে। প্রতিটা তুলসী পাতা খেলে এটা শরীরের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের মতন সমস্যা।

তাই যেকোনো সার্জারির ২ সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ রাখুন। এছাড়াও এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এই জন্য যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। উপরোক্ত সমস্যা গুলো যাদের মাঝে রয়েছে তাদের তুলসী পাতা এড়িয়ে চলা উচিত।

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসী পাতার রস আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। বিশেষ করে কাশির জন্য তুলসী পাতা বেশ উপকারী। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম। দুটি তুলসী পাতা,২ টেবিল চামচ মধু, আধা চিমটি হলুদের গুঁড়া, আধা চিমটি লং এর পেপার এবং আধা চিমটি কালো গোল মরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লাড করে নিতে হবে।
এবার এগুলো ছেঁকে রস বের করে নিতে হবে। এখন প্রতিদিন ৫ মিলি করে তিনবার খেতে পারবেন। দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এটি খাওয়া যাবে। এটি খাওয়ার ৫-১০ মিনিট পরে হালকা গরম পানি খাবেন। যেহেতু প্রতিটি উপাদানই গরম তাই এটি একনাগারে দুই সপ্তাহের বেশি খাওয়া ঠিক হবে না।

লেখকের শেষকথা-তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা-কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে সম্পূন্ন পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা,তুলসী গাছের পুষ্টিগুণ এবং কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য।আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন তুলসী পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে।

এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ফলো করুন।আর আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url