টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন টমেটো খাওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্পূন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান পেয়ে যাবেন।
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মধ্যে শুধু টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়া ও টমেটো খাওয়া সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক টমেটো খাওয়া সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আরো নানান তথ্য সম্পর্কে।
ভূমিকা-টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি সারা বিশ্বের বিভিন্ন রকম ভাবে ব্যবহৃত হয়। কেউ কাঁচা টমেটো খেতে পছন্দ করে আবার কেউ বা পাকা টমেটো খেতে পছন্দ করে। পাকা টমেটো স্বাদে ও পুষ্টিগুণে অনন্য। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সারা বছরই টমেটো পাওয়া যায়। তবে শীতকালে এটির ফলন বেশি হয়। এজন্য টমেটো শীতকালীন সবজি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আর শীতকালে এটি বেশি পাওয়া যায় বলে টমেটো মৌসুমী সবজি হিসেবে ও বিবেচিত হয়। তবে এটি সাধারণত সবজি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহৃত হয়। রান্না করা টমেটোতে লাইকোপিনের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের শরীরের জন্য আরও বেশি উপকারী।
পাকা টমেটোর পুষ্টিগুণ
পাকা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিচে পাকা টমেটোর কিছু পুষ্টিগুণ উল্লেখ করা হলোঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা টমেটো তে পুষ্টি উপাদান রয়েছে
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
পানি | ৯৩.১গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৯ গ্রাম |
চর্বি | ০.১ গ্রাম |
খনিজ | ০.৬ গ্রাম |
আঁশ | ০.৭ গ্রাম |
শর্করা | ৩.৬ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৪৫.৮ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১১৪ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.১৯ মিলিগ্রাম |
সালফার | ২৪ মিলিগ্রাম |
ক্লোরিন | ৩৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৩২০ মাইক্রগ্রাম |
থায়ামিন | ০.১৩ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাবিন | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
নিকোটিনিক অ্যাসিড | ০.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ২৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম |
অক্সালিক এসিড | ২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৩৬ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪৮ মিলিগ্রাম |
লৌহ | ০.৪০ মিলিগ্রাম |
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
পাকা টমেটো একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি। পাকা টমেটো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাকা টমেটোর খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ
- পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ- পাকা টমেটোতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম ও ফাইবার থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এছাড়াও এতে থায়ামিন, নিওসিন, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার ও পাওয়া যায়।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ-পাকা টমেটোতে থাকা লাইকোপিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- শ্বাস যন্ত্রের উন্নয়ন- এতে থাকা লাইকোপিন ও ক্যারোটিনয়েড ফুসফুস ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে এই এন্টিঅক্সিডেন্ট ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের জন্য ভালো- পাকা টমেটো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও বলিরেখা প্রতিরোধ করে এতে থাকা ভিটামিন সি ও লাইকোপিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি কোলাজেন ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ এবং আমাদের ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
- হজমে সহায়ক- এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে- পাকা টমেটোতে ক্যালরি কম ও পানি বেশি থাকে এজন্য পাকা টমেটো খেলে ওজন ও কমতে সহায়ক হয়।
- ব্যায়ামের পর ক্লান্তি দূর করতে- পাকা টমেটোর রসে রয়েছে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটের একটি চমৎকার উৎস। তাই শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরানোর পরে টমেটো খেলে শরীরে শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর হয় সতেজ ও প্রাণবন্ত।
- হাড় মজবুত রাখে- এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে থাকায় হাড়ের গঠন ভালো রাখে। ভিটামিন কে প্রোটিন গঠন এবং সক্রিয় করতে ভূমিকা রাখে যা রক্ত জমাট বাঁধতে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- এটি আমাদের পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন বি যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পটাশিয়াম রক্তে উপস্থিত থাকার কারণে কিডনির রক্ত প্রবাহে সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয় যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কোষের বৃদ্ধিতে- পাকা টমেটোতে রয়েছে ফোনেট বা ভিটামিন বি৯। এটি টিস্যুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কোষের কার্যকারিতা সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফোনেট খুবই উপকারী,কেননা এটি গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের ভ্রুণের নিউরাল কিউ এর ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়তা করে, যা গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী- পাকা টমেটো রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে কারণ এতে ক্রোমিয়াম নামক এক ধরনের খনিজ থাকে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক- পাকা টমেটোতে লাইকোপিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা পোস্টেড, কোলন ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে- পাকা টমেটোতে ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং পটাশিয়াম থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- চোখ ভালো রাখে- টমেটোতে থাকা আরেকটি এন্টিঅক্সিডেন্ট হল বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- পাকা টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসেরই যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে। পাকা টমেটো খাওয়া যেমন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী তেমনি পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। উপরের আলোচনা থেকে আমরা পাকা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি এবার জানব এর অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাকা টমেটো খাওয়ার অপকারিতা গুলোঃ
- এসিডিটি বাড়াতে পারে- টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইটিক ও মালিক এসিড থাকে যা পেটে এসিডিটি বাড়াতে পারে।
- এলার্জি সমস্যা হতে পারে- কিছু মানুষের টমেটোতে এলার্জি থাকতে পারে। যার ফলে টমেটো খেলে ত্বকে চুলকানি, ফোলা ভাব বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে- এতে অক্সালেট নামক একটি যৌগ থাকে যার ফলে পাকা টমেটো বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত টমেটো খেলে ডায়রিয়া হতে পারে- এতে থাকা সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া যা পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত টমেটো খেলে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে- পাকা টমেটোতে থাকা মেলানিন উপাদান টি জয়েন্টের ব্যথা বা বাত ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সোলানাইন নামক একটি ক্ষারক উপাদান থাকে যা দেহের বিভিন্ন কোষে ক্যালসিয়াম তৈরির জন্য দায়ী আর দেহে এ যোগের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা প্রদাহ তৈরি শুরু করে। যার ফলে জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
- রক্ত পাতলা করতে পারে- পাকা টমেটোতে থাকে কিউমরিন যার রক্ত পাতলা করতে পারে যার ফলে পাকা টমেটো বেশি খেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়া নিরাপদ কিনা
প্রিয় পাঠক আপনারা জানতে চেয়েছেন গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়া নিরাপদ কিনা সেই সম্পর্কে। হ্যাঁ অবশ্যই গর্ভাবস্থায় পাকা টমেটো খাওয়া নিরাপদ।তবে তা যেন হয় পরিমিত পরিমানে। গর্ভবতী মহিলা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে পাকা টমেটোতে। পাকা টমেটোতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট, লাইকোপিন
এবং আইরন এই সবগুলো উপাদানই গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ফোলেট।এদিকে ভিটামিন সি গর্ভবতী মহিলার প্রয়োজনীয় আয়রনের শোষণকে উন্নত করে এবং এইজন্য গর্ভবতী অবস্থায় আয়রন খাওয়ার পাশাপাশি টমেটো খেলে আয়রন শোষণ আরো উন্নত হয়।তবে গর্ভবতী মহিলা খুব ক্লান্ত বোধ করতে পারে,
আর এমন ঘন ঘন ক্লান্তি বোধ হচ্ছে গর্ভাবস্থার লক্ষণ। এই সময় টমেটো খেলে টমেটোর ক্যালরি উপাদান গর্ভবতী মহিলার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে। সুতরাং প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন গর্ভাবস্থায় পাকা টমেটো একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য কতটুকু প্রয়োজন।
লেখকের শেষকথা-টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে সম্পূন্ন পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য।আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন টমেটো খাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে।
এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ফলো করুন। আর আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url