বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়

বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয় সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন বিলাতি আমড়ার সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্পূন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান পেয়ে যাবেন।
বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মধ্যে শুধু বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়া ও বিলাতি আমড়া সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক বিলাতি আমড়া সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আরো নানান তথ্য সম্পর্কে।

ভূমিকা-বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়

আমড়া হচ্ছে সুস্বাদু একটি ফল। এটি সাধারণত কাঁচা খাওয়া যায়। এছাড়াও আমড়া দিয়ে আচার, চাটনি এবং জেলি বানানো যায়। আমড়া খেলে অনেক অনেক সময় মুখের রুচি বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও আমড়া তে রয়েছে অসংখ্য গুনাগুন। পুষ্টিতে ভরপুর আমড়া একটি জনপ্রিয় ফল। 
আমড়া তে যে পুষ্টি রয়েছে তা প্রায় তিনটি আপেলের পুষ্টির সমান। আমড়া তে আপেলের চাইতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আইরন রয়েছে। এজন্য এটিকে গোল্ডেন আপেলও বলা হয়ে থাকে। আমড়া হচ্ছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল।

আমড়ার পুষ্টিগুণ

আমড়া নানান পুষ্টি গুণে ভরা সুস্বাদু একটি জনপ্রিয় দেশীয় ফল। এতে রয়েছে আপিলের চাইতেও বেশি প্রোটিন ক্যালসিয়াম ও আয়রন এবং এতে আরো রয়েছে আমাদের দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ভিটামিন সি।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়া তে পুষ্টি উপাদান রয়েছে
পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
খাদ্য শক্তি৬৬ কিলোক্যালোরি
ক্যালোরি২৯ গ্রাম
শর্করা১৫ গ্রাম
প্রোটিন১.১ গ্রাম
চর্বি০.১ গ্রাম
ক্যালসিয়াম৫৫ মিলিগ্রাম
আইরন৩.৯ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন৮০০ মাইক্রো গ্রাম
থায়ামিন০. ২৮ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন০.০৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি৯২ মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ০.৬ গ্রাম

বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়

আমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আইরন, ক্যালসিয়াম এবং আঁশ, যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। এছাড়াও আমড়া হজমেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমড়া এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। আমড়াতে ক্যালোরি ও খুব কম থাকে। চলুন আমরা এবার জেনে নেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিলাতি আমড়ার উপকারিতা গুলোঃ
  • বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেঃ আমড়াতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার।এই ফাইবার পাকস্থলীর ক্রিয়া প্রক্রিয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে ভূমিকা পালন করে। তাই বদহজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মত অস্বস্তিকর সমস্যাগুলোকে দূরে রাখার জন্য আমড়া খেতে পারেন।
  • ভিটামিন সি এর অভাব মেটাতেঃ আমড়া তো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন উৎপাদনে ও সাহায্য করে। কোলাজেন আমাদের স্কিন, লিগামেন্ট, টেন্ডন ও কার্টিলেজকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি আমড়া খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদার প্রায় ৪০%-৫০% পূরণ হয় ।প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়া তে থাকে ৪৬.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আমড়া তে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ফ্রি মেডিকেলের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় আমড়া খেলে স্কার্ভি রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। এটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাড় ও দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতসহ নানান রোগের নিরাময়ে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
  • মুখের রুচি ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতেঃ আমড়া তে রয়েছে কিছু ভেষজ গুণ, যা কফনাশক ও পিত্র নাশক। তাই আমড়া খেলে মুখের রুচি বাড়ে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির হয়।,এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ এতে বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট ,ভিটামিন মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। আর এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্টেসের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে আমড়ার ভূমিকাঃআমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এতে ক্যালরির পরিমাণ ও কম থাকে, তাই আমড়া খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
  • বার্ধক্য প্রতিহত করতেঃ আমড়াতে রয়েছে এন্ট্রি অক্সিডেন্ট উপাদান,যা বার্ধক্যকে প্রতিহত করে।এছাড়া ও এটি ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে ও সহায়তা করে।
  • ত্বক সুস্থ রাখতেঃ আমড়া খেলে ত্বকের ব্রণ কমে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমড়া দারুণ উপকারী। আমড়াই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই আমড়া খেলে ত্বক উজ্জ্বল থাকে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে নিয়মিত আমড়া খাওয়া উচিত। ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমড়া খুবই কার্যকর।
  • মূত্রবর্ধকঃ এটি আমাদের শরীরে মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। পর্যাপ্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে তরল বের করে দিতে সহায়তা করে যার ফলে শরীর থেকে সোডিয়াম কমে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
  • হৃদরোগ প্রতিহত করতেঃ আমড়ায় থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্ট্রি অক্সিডেন্ট। আমড়া রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাই। নিয়মিত আমড়া খেলে হৃদ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • সর্দি, কাশি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতেঃ সর্দি কাশি রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে আমড়া দারুণ কার্যকরী। এছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ও আমড়া কার্যকরী। যার ফলে আমড়া খেলে নানা রকম সংক্রমণ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতেঃ আমড়া তো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে হলে আমড়া খাওয়া দরকার। আমড়া তে আয়রন থাকার কারণে আমড়া খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে। ফলে এটি রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • আয়রনের অভাব মেটাতেঃ শরীরের সার্বিক কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য আয়রনের দরকার হয়। আর সেই আইরন আমরা পেতে পারি আমড়া থেকে। আমাদের শরীরের অক্সিজেন সরবরাহকারী আইরন সমৃদ্ধ উপাদান হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে আমড়ার ভূমিকা রয়েছে। তাই আমরা প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়া থেকে ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন পেতে পারি, যা দৈনিক আয়রনের চাহিদা প্রায় ২০% থেকে ৩৫ % পূরণ করতে পারবে।
  • ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতেঃ আমড়া ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস।প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে আমড়া খাওয়া যেতে পারে। শিশুর দৈহিক গঠনে ক্যালসিয়াম খুব দরকারী। তাই শিশুদেরও আমড়া খেতে উৎসাহিত করতে হবে। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ের সমস্যা, মাংসপেশির খিচুনি এছাড়াও অন্যান্য নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আমড়া খাওয়ার অপকারিতা

আমড়া খাওয়ার তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা নেই। ইতিমধ্যে আমরা বিলাতি আমড়া খাওয়ার ১২ উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি, এখন জানবো আমড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। আমরাতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, এটা আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। 
অতিরিক্ত পুষ্টিগুনে ভরা আমড়া পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে বদহজম, পেটে ব্যথা ও নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমড়া একটি টক জাতীয় ফল। আর এজন্য এটি খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।তাই আমাদের আমড়া খেলে পরিমাণ মতন খেতে হবে তাহলে কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না।

গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় একটি নারীর জীবনের সেরা সময়। এ সময় নানান রকম দুশ্চিন্তা হতে থাকে। তবে নানান সমস্যার মাঝে আপনি একটি কাজ নিশ্চিন্তে করে যেতে পারেন তা হলো ফল খাওয়া। অনেকে ভাবে এই ফলটা খাব না ওই ফলটা খাব না কোনটা খেলে ভালো হবে কোনটা বেশি খাব ইত্যাদি। তবে গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়া যেতে পারে। কারণ আমড়া তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, 
আয়রন, ক্যালসিয়াম আর আঁশ। এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। এছাড়া আমড়া হজমেও সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনি পরিমাণ মতো আমড়া খেতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয়।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আমরা সাহায্য করতে পারে।
  • আমড়াতে রয়েছেনটি এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান তাই গর্ভাবস্থার জন্য আমরা খাওয়া ভালো।
  • এই সময় শরীরের রক্তস্বল্পতা পূরণের জন্য আমড়া খাওয়া প্রয়োজন কারণ আমড়া তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
  • আমড়া রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
  • এটি খেলে মুখের অরুচি ভাব দূর হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় তাই গর্ভাবস্থায় অবস্থায় এটি খাওয়া প্রয়োজন।
  • রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমড়া।
  • এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

লেখকের শেষকথা-বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয় 

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে সম্পূন্ন পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন বিলাতি আমড়ার ১২ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আমড়া খেলে কি হয়,আমড়ার পুষ্টিগুণ এবং আমড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য।আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন 
বিলাতি আমড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে।এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ফলো করুন। আর আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url