আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন আতা সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সম্পূন্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সমস্ত প্রশ্নের সঠিক সমাধান পেয়ে যাবেন।
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের মধ্যে শুধু আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়া ও আতা সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক আতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আরো নানান তথ্য সম্পর্কে।
ভূমিকা-আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
আতাফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। কিন্তু অনেকেই এই ফলটার নাম শুনেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত খাননি। বা অনেকে এই ফলটি খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকেই করেন না। তবে এটা অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল।
আতা ফলের পুষ্টিগুণ
আতা ফলে পুষ্টিগুণে ভরা। এতে রয়েছে নানান রকম ভিটামিন।
প্রতি ১০০ গ্রাম আতা ফলে পুষ্টি উপাদান রয়েছে
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শর্করা | ২৩.৬৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.০৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২৯ গ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.১১ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ১৪ মাইক্রোগ্রাম |
পটাশিয়াম | ২৪৭ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৪ মাইক্রোগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২১ মিলিগ্রাম |
মোট এনার্জি | ৩৯৩ কেজি |
আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা
খেতে সুমিষ্ট এই দেশি ফলটি নানান পুষ্টি উপাদানে ভরা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দেশীয় এই ফলে রয়েছে অনেক উপকারিতা। চলুন আর জেনে নেওয়া যাক আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ
- এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে আতায় । যা শরীরের ফ্রি রেডিকেল থেকে মুক্তি দিতে পারে। ফ্রি রেডিকেল কোষের ক্ষতি বার্ধক্য ও ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তাই পরিমিত আতা খেলে এগুলো থেকে আমারা মুক্তি পেতে পারি।
- অনেকের দুগ্ধ জাত খাবারে এলার্জি থাকে। তাই দুধ দিয়ে তৈরি কোন খাবার খেতে পারেন না,তাই তাদের পুষ্টিগুণ ও কম থাকে। কিন্তু বিকল্প হিসেবে আতা ব্যবহার করতে পারেন কারণ আতাতে রয়েছে সেই পরিমাণ পুষ্টিগুণ।
- যারা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত আতা খেতে পারেন। কারণ আতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
- ভিটামিন বি ৬ হচ্ছে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন সহ নিউরোট্রান্সমিটার বা হ্যাপি হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর আতা হচ্ছে ভিটামিন বি ৬ এর চমৎকার একটি উৎস। ফলে আতা খেলে আপনার মন ভালো থাকবে।
- আতায় আরো রয়েছে পলিফেনলিক যৌথ যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার কিছু দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
- আতা চোখের জন্য ভালো। কারণ এতে রয়েছে লুটেইন ও রিবোফ্লেভিন নামের ক্যারোটিনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের প্রধান এন্টি অক্সিডেন্ট গুলোর মধ্যে একটি। তাইতো চোখের ছানি পড়া ও দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে আতা।
- আতা নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। কারণ আতা ফাইবার সমৃদ্ধ।
- আতায় থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- আতায় রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
- আতা ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ।আতা ফলের নরম অংশ ত্বক ও চুলে ব্যবহার করলে ও তা ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ও কাজ করে। এটি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে ও সাহায্য করে।
- আতা ফল উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ যেমন -স্টোক, হৃদরোগ ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।
- আতা ফলের খোসা দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং মাড়িকেও মজবুত করে।
- আতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তি। এটা শক্তির উৎস তাই এটা খেলে ওজন বাড়তে সাহায্য করে।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য আতা ফল খুবই উপকারী। এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় আতা ফল খেলে সকালের দুর্বলতা দূর করে শারীরিক ব্যথার উপশম ঘটায়। এটি দুগ্ধ দানকারী মায়েদের জন্য ও উপকারী। এটি নিয়মিত খেলে মায়ের বুকের দুধ ও পর্যাপ্ত তৈরি হয়।
- স্তন্য ক্যান্সারের প্রতিরোধ করতে আতা গাছের পাতার নির্যাস কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি স্তনের মধ্যে থাকা বিষাক্ত টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে।
- এটি একটি এন্টি ইনফর্মেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফল। এর এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য অ্যাজমার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এজন্য হাঁপানি রোগীদের জন্য আতাফল বেশ উপকারী।
- প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে আতা ফলে। আমাদের শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। আতাফল পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে সক্ষম। তাই আমরা নিয়মিত আতা ফল খেলে আমাদের হাড় মজবুত এবং হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে পারব।
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ফল খাওয়া অন্যতম সুঅভ্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয় ,কারণ ফলে রয়েছে ভিটামিন খনিজ পদার্থ এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগের পাওয়ার হাউস। চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলোঃ
- আতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ৬। যার ফলে মহিলাদের সকালের অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাব কমতে পারে।
- অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আতা ফল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কারণ আতা ফলে রয়েছে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- আতা ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম গর্ভবতী মায়েদের চাপ এবং বিষন্নতা কমাতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত আতা ফল খেলে রক্তের কোলেস্টেল এবং এল ডি এল কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে ।
- আতোফলে প্রচুর পরিমাণে এন্ট্রি অক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকার কারণে রক্ত ডিটক্সিফাই করে এবং মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার সম্ভাব্য কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে এটা নিয়মিত খেতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
- আতার বীজ দেখতে খুবই সুন্দর এবং পিচ্ছিল টাইপের আতা ফল খেতে খেতে যদি কয়েকটি বীজ খেয়ে ফেলা যায় তবে হজমের গন্ডগোল দেখা দিতে পারে।
- আতাফল একটি ঠান্ডা প্রকৃতির ফল তাই কোনরকম ঠান্ডা সংক্রমণ দেখা দিলে এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যাদের এমন সমস্যা দেখা দিবে তাদের গর্ভাবস্থায় আতাফল না খাওয়া উচিত। কারণ আতাতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
শরিফা আর আতাফল কি এক
অনেকে জানতে চেয়েছেন শরিফা আর আতা ফল কি এক এই বিষয়ে, তবে চলুন এখন আমরা জেনে নিই এ বিষয়ে । শরিফা আর আতা ফল একি।কিন্তু এরা হচ্ছে একই প্রজাতির ভিন্ন দুটি জাত। এবং এরা স্বাদের দিক দিয়ে ও কিছুটা আলাদা।
শরিফা ও আতা ফলের মধ্যে পার্থক্য
শরিফা ও আতা ফল একই। তবে অঞ্চল ভেদে এই ফলের নাম এবং জাতের কিছু পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশে এই ফলটির দুই ধরনের প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় একটি হলো আতা আরেকটি হলো শরিফা। নিচে শরিফা ও আতাফল এর মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ
আতা ফল | শরিফা ফল |
---|---|
আতা ফল দেখতে অনে্কটা গোলাকার | শরিফা ফল দেখতে কিছুটা হূদপিন্ড আকূ্তির মতো |
আতা ফলের উপরের চামড়া মসূন থাকে | শরিফা ফলের উপরের চামড়ায় গুটি গুটি চোখ থাকে |
আতা ফল নোনতা স্বাদের হয়ে থাকে | শরিফা ফল কিছুটা মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে |
পাকা আতা ফল খাওয়ার সময় মুখ লবণাক্ত হয়ে যায়, তাই এটার বাজারে চাহিদা কম | পাকা শরিফা ফল খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো দানা দানা লাগে, সে কারণে এটির বাজারে চাহিদা অনেক |
শেষ কথা-আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনযোগ সহকারে সম্পূন্ন পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন আতা ফল খাবার দারুন ১৭ উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য।আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন আতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে।এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ফলো করুন। আর আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url