অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি

প্রিয় পাঠক আপনি কি অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন অর্জুন গাছ সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেল থেকে অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা সম্পর্কে ও জানতে পারবেন।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি সেই সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন অর্জুন গাছ সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো। তাই অর্জুন গাছ সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা-অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি

প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ শাস্ত্রে অর্জুন গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। এটা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকিৎসার জন্য অর্জুন গাছের পাতা, ছাল ও ফল সবগুলি ব্যবহৃত হয়। অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত খেলে উচ্চ এবং নিম্ন রক্তচাপ, খারাপ কোলেস্টেরল এবং হার্ট ব্লক এর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 
অর্জুনের ছাল নানা শারীরিক সমস্যায় অর্লৌকিকভাবে কাজ করে। এটি রক্ত সঞ্চালন কে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্টের ব্লকেজ খুলতেও সাহায্য করে।

অর্জুন গাছের গুনাগুন

অর্জুন গাছের গুণের শেষ নেই এই গাছের ছাল পাতা ফল সমস্ত কিছুতেই রয়েছে ভেষজ ঔষধি গুণ। অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া ও এতে আছে গ্লুকোসাইড। এর পাশাপাশি এতে আরো আছে ভিটামিন ই এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। অর্জুন গাছের ছালে আছে আরো অনেক খনিজ উপাদান। যা আমাদের অনেক সমস্যা থেকে সরাসরি মুক্তি দেয়। 
অর্জুন গাছ থেকে যে ট্যানিন আহরিত হয় সেটি চামড়ায় ব্যবহৃত করা হয়। এই ট্যানিন মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করার জন্য এটি সাহায্য করে। এছাড়া ও শরীরের ক্ষত খোস পাচড়া দেখা দিলে অর্জুন গাছের ছাল বেটে লাগালে ক্ষত সেরে যায়।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি

অর্জুন গাছ একটি বিশেষ উদ্ভিদ এই গাছ প্রাচীনকাল থেকে অনেক রোগের চিকিৎসার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মোট কথা কোন বাড়িতে যদি একটি অর্জুন গাছ থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সেই বাড়িতে একজন চিকিৎসক রয়েছে। কারণ অর্জুন গাছ এবং একজন চিকিৎসক সমান। গাছের পাতা থেকে ফল পর্যন্ত সমস্ত কিছুই ব্যবহার হয়ে আসছে ভেষজ চিকিৎসায়। এবার জেনে নেই অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতাগুলো ঃ
  • হৃদরোগে: অর্জুনের বাকল এই হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারণ অর্জুনের বাকলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কো এনজাইম কিউ ১০ যা হৃদ্যোগ ও হার্ট এটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অর্জুনের ছাল বেটে খেলে হৃদরোগের পেশী শক্তিশালী হয়। যার ফলে হৃদপিন্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অর্জুনের ছাল নিয়মিত খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • বুক ধরফরানি কমাতে: যাদের বুক ধরফর করে কিন্তু রক্তচাপ নেই তাদের জন্য কাঁচা অর্জুনের ছাল বা শুকনো অর্জুনের ছাল ছেঁচে দুধ এবং পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে খেলে বুক ধরফরানি কমে যাবে।
  • ব্রণ সমস্যার সমাধানে: ব্রণ সারার জন্য অর্জুনের বাকল গুড়ো মধুর সাথে মিশিয়ে লাগালে ব্রণ ভালো হয়ে যায়।
  • হজম শক্তি বাড়াতে: অর্জুনের ছাল খাদ্য তন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ফলে হজম শক্তি বাড়ে।
  • লিভার সিরোসিসে: অর্জুন গাছের ফল গুড়ো লিভার সিরোসিসে টনিক হিসেবে ভালো কাজ করে।
  • মুখের ব্যথায়: এখানে অর্জুনের ছাল মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে এবং মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির ব্যথা উপশম করে।
  • উচ্চ রক্তচাপে: অর্জুনের ফল রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মূত্র বর্ধন করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে: অর্জুনের নিয়মিত খেলে ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধ হয়। কারণ অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে গ্যালিক অ্যাসিড আর লুটেনোনিন। সেজন্য প্রতিদিন নিয়মিত অর্জুন গাছের ছাল খেলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে পারবেন। সপ্তাহে দুই দিন শুধু রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে অর্জুন গাছের ছালের গুড়া দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
  • শরীরের ক্ষত দূরীকরণে: অর্জুনের ছাল বেটে শরীরের ক্ষত স্থানে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • রক্তপিত্ত দূরীকরণে: অনেক সময় শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তপিত্ত হতে পারে। তখন আমরা খুবই ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সমস্যার সমাধানের জন্য অর্জুনের ছাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেটা থেকে ছেকে খেয়ে নিতে হবে। এভাবে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে এটি খেতে হবে। তাহলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • জ্বর নিরাময়: জ্বর হলে অর্জুনের ছাল খেলে জ্বর নিরাময় হয়।
  • হাঁপানি রোগ নিরাময়: হাঁপানি রোগ এর জন্য অর্জুনের ছাল খুবই উপকারী। তাছাড়া অর্জুনের ফল শুকনো টুকরো করে নিয়ে কলকেতে করে তামাকের মত করে টানলে ও হাঁপানি রোগে আরাম পাওয়া যায়।
  • যৌন রোগে: নিয়মিত অর্জুনের ছালের রস খেলে যৌন উত্তেজনা বাড়ে। অর্জুনের ছাল চর্ম ও যৌন রোগের জন্য খুব ভালো কাজ করে।
  • রক্ত পড়া বন্ধ: কোন স্থানে কেটে গেলে সেখানে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে বা অর্জুনের রস ও ফলের গুঁড়ো ক্ষতস্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
  • পেটের অসুবিধায়: পেট ফাঁপা ও বদহজম এসব জাতীয় অসুবিধার জন্য অর্জুনের ছালের রস খুব ভালো কাজ করে। এটা নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • শ্বেত রোগ নিরাময়ে: প্রতিদিন নিয়মিত অর্জুনের ছাল ভেজানো পানির সাথে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে শ্বেত রোগ নিরাময় হয়।
  • হাড় ভাঙ্গা নিরাময়ে: হাড়ভাঙ্গা জোড়া লাগাতে ও অর্জুনের ছাল খুব উপকারী। ভাঙ্গা স্থানে অর্জুনের ছাল ও তার সাথে রসুন এবং হাড়জোড়া একত্রে বেটে প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে হাড়ভাঙ্গা জোড়া লাগে। তবে প্রলেপ দেওয়ার পূর্বে ভাঙ্গা অস্থিগুলো যথাস্থানে পুনঃস্থাপন করে নিতে হবে।
  • দূর্বলতা দূরীকরণ: প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের মধ্যে অর্জুনের ছাল চূর্ণ মিশিয়ে সকালে এবং রাত্রে দুইবার নিয়মিত খেলে দুর্বলতা কমে। তবে নিয়মিত এক মাস সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • রক্ত আমাশা প্রতিকারে: কাঁচা অর্জুনের ছাল পরিমাণমতো নিয়ে সেটা পিষে ঠান্ডা পানি দিয়ে প্রতিদিন দুইবার খেলে রক্ত আমাশা নিরাময় হয়।
  • ঋতুস্রাবের সমস্যায়: প্রায় সময় দেখা যায় অনেক মেয়েদেরই অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়। আর সে সময় পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এই রকম সমস্যা দেখা দেয়। আবার নিয়মিত হলেও পেটে ব্যথার মতন সমস্যা দেখা দেয়। তাই পেটে ব্যথা কমানোর জন্য মেয়েরা সাধারণত অন্যরকম কোন ওষুধ খেতে চায় না। কিন্তু এই সময়ে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্জুন গাছের ছালের গুড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। খানিক পরে দেখবেন ব্যথা অনেকটা কমে গেছে।

অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা

প্রাচীন কালে প্রতিটা রোগের তেমন কোন ওষুধ ছিল না। তখন মানুষ ভরসা করত বিভিন্ন ভেষজ উপাদানের উপর। আর এই ভেষজ উপাদানের মধ্যে সর্বপ্রথমে নাম রয়েছে অর্জুন গাছের। হার্টের সমস্যা দূর করার এবং প্রতিরোধ করার জন্য অর্জুন গাছের ছাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ও এই গাছের ছোট্ট একটি ফল সেটা ও বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু ছাল এবং ফলই নয় এই গাছের পাতা ও অনেক উপকারী।
  • হাঁপানি রোগীরা অর্জুন গাছের ফল টুকরো করে তামাকের মতো ধোঁয়া টানলে উপকার হয়।
  • যাদের হার্নিয়া রয়েছে তাদের অর্জুন গাছের ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • অর্জুন গাছের ফল চূর্ণ রক্তচাপ কমায়। মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভার সিরোসিসের টনিকে ও কাজ করে।

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি এই সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। তবে প্রতিটা জিনিসেরই ভালো এবং মন্দ উভয় দিকি রয়েছে। এক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছালের বেলায় ব্যতিক্রম নয়। তাই অর্জুন গাছের ছাল আমাদের বুঝেশুনে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতন খাওয়া উচিত।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অর্জুন গাছের ছাল ক্ষতিকর। গর্ভবতী অবস্থায় অর্জুন গাছের ছাল না খাওয়াই উত্তম।
  • যাদের রক্তে সুগার বেশি আছে অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অর্জুন গাছের ছাল না খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কি ,অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা , অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা এবং অর্জুন গাছের গুনাগুন সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়া ও আপনি যদি ভেষজ বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url