লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি কি লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা কি এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন লাউ শাক সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেল থেকে গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ও জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা কি সেই সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন লাউ শাক সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো। তাই লাউ শাক সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা-লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ শাকের সম্পর্কে আমরা কম বেশী সবাই জানি। ঘরের চালে উঠানে বা আবাদি জমিতে অনেক জায়গাতেই লাউ গাছ জন্মানো হয়। লাউ শাক বাঙালির একটি প্রিয় খাবার। এটা দেখতে খুব সাদাসিদে হলে ও এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। লাউ শাক আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত লাউ শাক খেলে নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সাদা তিলের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ শাকের পুষ্টিগুণ
পুষ্টির দিক থেকে লাউ শাক অতুলনীয়। এতে ক্যালরি কম থাকাই ডায়েট চার্টের খাবারে অনেকে এটি রাখেন। এটি আমাদের শরীরের যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে থাকে এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ এড়িয়ে রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের সুস্থ রাখতে ও সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ শাক এ পুষ্টিগুণ রয়েছে
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরী | ২৫ কিলোক্যালরী |
প্রোটিন | ১.৫ গ্রাম |
চর্বি | ০.১গ্রাম |
ডায়েটরি ফাইবার | ২.৩ গ্রাম |
কার্বহাইড্রেট | ৪.৫ গ্রাম |
চিনি | ০.৭ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৮ মিলি গ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩১২ মিলি গ্রাম |
ভিটামিন এ | ৪৪৬০ আই ইউ |
ভিটামিন সি | ৩২ মিলি গ্রাম |
আইরন | ১.১ মিলি গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৫৫ মিলি গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম |
লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। তবে এর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। লাউ শাক ভর্তা, ভাজি, তরকারি নানাভাবে আমরা খেতে পারি। এতে রয়েছে ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
লাউ শাকের উপকারিতা
এতে একাধিক উপকারী উপাদান রয়েছে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক লাউ শাকের উপকারিতা গুলোঃ
- লাউ শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের ঠান্ডা লাগা এবং কোন ধরনের সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- লাউ শাক মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে, যার ফলে ঘুমের সমস্যা হয় না। এছাড়া ও এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং চোখের নানা রকম সমস্যা এবং সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। কারণ লাউশাক হচ্ছে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গর্ভের শিশুর স্পাইনাল কর্ড এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড। তাই আমাদের গর্ভাবস্থায় লাউশাক খেলে ফলিক এসিডের ঘাটতি পূরণ হবে।
- এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে এবং পাইলস প্রতিরোধে ও সাহায্য করে। কারণ লাউ শাকে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার।
- ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় শক্ত মজবুত করে। আর লাউ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।
- এটি কোলেস্টেরল ও ফ্যাট মুক্ত এবং কম ক্যালরিযুক্ত। তাই ওজন কমানোর জন্য এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাউ শাক খেতে পারেন।
- পটাশিয়াম আমাদের হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভুমিকা পালন করে। লাউশাক হচ্ছে একটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
- লাউ শাকের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
- এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই শাক নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত আমাদের লাউশাক খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
- লাউ শাকে রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য উপকারী হতে পারে লাউ শাক। কারণ লাউসাকে থাকে কিছু এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান যা রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লাউ শাকের অপকারিতা
এর যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। কেননা প্রতিটা জিনিসেরই ভালো-মন্দ উভয় দিকি থাকে। তাই লাউ শাকের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক এর অপকারিতা গুলোঃ
- অনেকের এতে এলার্জি থাকতে পারে। তাই লাউ শাক খেলে এলার্জির সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
- এতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত লাউ শাক খেলে রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এদিকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণের ফলে হৃদরোগীদের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত লাউ শাক খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে অক্সালিক এসিড থাকে। যার ফলে এটা একটু বেশি খেয়ে ফেললে ক্যালসিয়াম সংক্রান্ত নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত লাউশাক খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- আবার গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকারী মহিলার ক্ষেত্রে ও কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
মোটকথা খেলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো যদি দেখা দেয় তাহলে পরবর্তীতে লাউ শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন তাহলে জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে।
- লাউ শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড।গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে ফলিক এসিডের ঘাটতি পূরণ হয়। গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ড এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। কারণ ফলিক এসিডের অভাব হলে গর্ভস্থ শিশুর স্পাইনাল কর্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যার ফলে প্যারালাইসিস, মস্তিষ্ক বিকৃতি অথবা মৃত শিশুও জন্মাতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে লাউ শাক খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- লালশাকে রয়েছে উত্তমাচ্চার ভিটামিন সি। ভিটামিন সি ঠান্ডা ও যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।তাই গভাবর্স্থায় নিয়মিত লাউ শাক খেলে ঠান্ডা ও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় ওজন বেড়ে যায় কিন্তু কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট মুক্ত হওয়ায় লাউ শাক গর্ভাবস্থায় খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।লাউ শাকে ক্যালরি কম থাকে।
- লাউ শাক আইরন সমৃদ্ধ তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত লাউ শাক খেলে রক্তস্বল্পতার সম্ভাবনা কমে যায়।
- লাউ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য মতন সমস্যা দূর হয়।
- এটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পটাশিয়াম কোষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীরে তরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা, লাউ শাকের পুষ্টিগুণ এবং গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়া ও আপনি যদি খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url