এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার-সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক আপনি কি এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন নিম পাতা সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেল থেকে খালি পেটে নিম পাতা খেলে কি কি হয় এই বিষয় সম্পর্কে ও জানতে পারবেন।
এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার-সম্পর্কে জানুন
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন নিম পাতা সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো। তাই নিম পাতা সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা-এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার-সম্পর্কে জানুন

নিম গাছ হচ্ছে একটি চিরহরিৎ গাছ। ভারতে নিমকে ‌সাধারণত 'গ্রামের ঔষধালয়' বলা হত। কারণ নিমে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। বিভিন্ন দেশে এটা বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়। এই গাছের ছাল বেদনা নাশক এবং ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ও ত্বকের আলসার, পেটে ব্যথা, জ্বর, মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং যকৃতের রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিম একটি ঔষধি গাছ। এর মধ্যে রয়েছে নানান ঔষধি গুণ। যা যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জি সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি, যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তারা যখন তখন একটা অস্বস্তিতে পড়ে যায্‌ এলার্জির কারণে শুধু চুলকানি নয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও এলার্জির জন্য অনেক সাবধানে থাকতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হয় তাদের প্রিয় সব খাবারগুলো। 
আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডায়ও এলার্জি দেখা দেয়। এর ফলে ত্বক চুলকাতে থাকে আর চুলকানোর ফলে লাল লাল চাকা চাকা হয়ে ত্বক ফুলে যায়। চোখে বাতাস লাগলে চোখ চুলকায় ও চোখ লাল হয়ে যায়। চোখ চুলকানোর ফলে চোখ ফুলে যায়। এলার্জির কারণে দৈনন্দিন কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এই এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকি।

এতে সাময়িক সমাধান হলে ও আবার দেখা দেয়। তবে ওষুধ ছাড়া ও এলার্জি দূর করা সম্ভব। এটা হয়তো আমরা সকলে জানি না প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা অ্যালার্জি দূর করতে পারি। নিম গাছের পাতা বহু যুগ ধরে ওষুধি পাতা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে এলার্জি দূর করনে নিম পাতার ব্যবহার। প্রাকৃতিকভাবে এই নিমপাতা দিয়ে এলার্জি দূর করা সম্ভব চলুন এবার জেনে নেই এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।
  • কিছু নিমপাতা ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • এরপর এই শুকনো নিমপাতা ভালো করে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
  • এবার এটা একটি কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
এক গ্লাস পানিতে এক চামচের তিন ভাগের এক ভাগ নিম পাতা গুড়া এবং এক চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি দিয়ে আধাঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সেটা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে খাবার পরে ও রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন। এভাবে এক মাস নিয়মিত খাওয়ার পর আপনার এলার্জির যে সমস্যা তা অনেকটা কমে আসবে।

চর্মরোগের নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জানলাম।এখন চর্মরোগের নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানবো। চর্মোরোগ খুব একটা মারাত্মক রোগ। এটা খুব সহজে হয় কিন্তু সারতে বেশ সময় লাগে। বর্ষার সময় আর্দ্রতার কারণে চর্মরোগ হয় আর খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এই ত্বকে নিম পাতা ব্যবহার করলে উপকার হয়। 

তাই বর্ষার সময় চর্মরোগ থেকে দূরে থাকতে চাইলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শুকনো জামাকাপড় পরুন এবং সব সময় হাত পা শুকনো রাখুন। কারণ বেশি পানি নাড়লে দাদ ও চুলকানির সমস্যা বাড়তে পারে। চর্মরোগে নিমপাতার ব্যবহার খুবই উপকারী। কারণ নিম রয়েছে প্রচুর ঔষধি গুন। নিম গাছের শিকর থেকে পাতা , 
ফুল, বীজ,বাকল, কাঠ সবগুলাতেই রয়েছে প্রচুর গুন যা আমরা ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হতে পারি। এটি এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যুক্ত যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার ব্যবহার করে থাকি। চলুন তাহলে চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • কিছু নিমের ছাল এবং নিমের বীজ নিম পাতার সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।এবার ত্বকের যেখানে যেখানে সমস্যা সেই জাগায় এটি ভালো করে লাগিয়ে নিন। ব্রন,দাদ,চুলকানি, একজিমা ও ফোড়ার উপর ও এটি ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। এটি তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি দেবে।
  • পু্রানো নিমের গাছের ছাল মিহি গুড়া তৈরি করে রাখতে পারেন এই গুড়া তিন গ্রাম পরিমাণ নিয়ে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সকালে এর মধ্যে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে এতে ও চর্মরোগ উপশম পাওয়া যায়।
  • একজিমার সমস্যাই নিম পাতার রসে ব্যান্ডেজ ভিজিয়ে লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায় এমনকি দাদ এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য ও নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। দুই তিনবার ব্যবহার করলে অনেকটা আরাম পাওয়া যাবে।
প্রিয় পাঠক নিম পাতার ঔষধি গুণের কারণে আমরা এটা নিয়মিত ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ থেকে উপশম পেয়ে থাকি এটা হয়তো আমরা সকলে জানি না। তাই বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমি আপনাদের উপকার করার চেষ্টা করেছি মাত্র আশা করছি কিছুটা হলে ও আপনারা উপকৃত হবেন।

খালি পেটে নিম পাতা খেলে কি কি হয়

নিম পাতা এটা স্বাদে খুব তেতো কিন্তু এর ব্যবহারে শরীরের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে বহু শতাব্দী থেকে নিম পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে খাবার এবং ওষুধ তৈরিতে। নিম পাতা খেলে শরীরের নানান রকম উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু খালি পেটে নিম পাতা খেলে তার চেয়ে ও বেশি উপকার পাওয়া যায়। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে নিম পাতা খেলে শরীরে কি কি উপকার হয়।
  • এখন মানুষ প্রায় বেশিরভাগ সময় বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন আর যার ফলে শরীরে নানান রকম রোগের বাসা বাঁধে। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতা খেতে পারেন কারণ নিম পাতা সংক্রমণ তৈরি করা জীবাণুকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। নিম পাতায় রয়েছে প্রদাহ রোধী উপাদান যা খালি পেটে খেলে লিভার ভালো থাকে।
  • এদিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিম পাতা বেশ উপকারী কারণ নিম পাতার স্বাদ তেতো আর ব্লাড সুগারের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন নিম পাতা খেতে পারেন।
  • এছাড়া ও নিম পাতাতে রয়েছে ফাইবার যা পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। সেজন্য নিয়মিত নিম পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত নিম পাতা খেলে এটি শরীরে সম্পূর্ণরূপে রক্ত পরিষ্কার করে। নিম পাতা রক্ত থেকে টক্সিন বের করে রক্তকে ডিটক্সিফাই করে। যার ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ রক্ত পরিষ্কার থাকলে শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারে না।
  • নিমপাতাতে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন, মিনারেল এবং অক্সিজেন যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নিমপাতা নিয়মিত খেলে এটি সর্দি কাশির মত রোগ থেকে উপশম করতে ও সাহায্য করে।

ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য রক্ষায় নিম পাতার ব্যবহার

মুখের ত্বকের যত্ন নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় পড়ে যায়। এমনকি একটা ব্রণ হলে চিন্তা করতে করতে আর ও অনেক কয়েকটা ব্রণ উঠে মুখে। কিন্তু হাতের নাগালেই এই ব্রণের থেকে উপশমের উপাদান রয়েছে তা হলো নিমপাতা ব্যবহার। প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে নিম পাতার ব্যবহার আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। নিম পাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে কিন্তু এখন অনেকেই বিভিন্ন রেডি কসমেটিক এর ছলনায় পড়ে নিম পাতার গুনের কথা ভুলে গেছে।
  • এটিতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। ব্রণের সংক্রমণ হলে নিম পাতা লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
  • নিম পাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, নতুন চুল গজায় এবং মাথার ত্বকের চুলকানি কমে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কাঁচা হলুদের সাথে নিমপাতা ব্যবহার করলে ভালো হয়।তবে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। আর নিমপাতার সাথে হলুদের পরিমাণ কিছু কম দিতে হবে।
  • ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে নিমের তেলে যা ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী।
  • নিয়মিত নিমের পাতা খেলে শরীরের অনেক উপকার হয় পরিপাকতন্ত্রের গতি বাড়ে সেই সাথে সাথে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দেয়। যার ফলে রক্তের শুদ্ধতা বাড়ে এছাড়া ও শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর হয় আর কোষ্ঠকাঠিন্য না হলে ত্বক থাকবে পরিষ্কার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন দুই তিনটি নিম পাতা চিবিয়ে খেতে হবে ।আর যদি নিম পাতা চিবিয়ে খেতে সমস্যা হয় তবে নিমপাতা বেটে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে রাখতে পারেন। এটা ভালো করে শুকিয়ে গেলে কাচের বয়মে সংরক্ষণ করুন। তারপর প্রতিদিন দুই তিনটি বড়ি পানি দিয়ে খেয়ে নিন এতেভও উপকার হবে।
  • যাদের গায়ে চুলকানি ও দুর্গন্ধ হয় তারা নিম পাতা সিদ্ধ পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন গোসল করতে পারেন তাহলে সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
  • নিম পাতা সিদ্ধ পানি ও ত্বকের জন্য উপকারী। এই পানি বোতলে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন তারপর প্রতিদিন ব্যবহৃত ফেসপ্যাক এর পেস্ট তৈরিতে এটা পানির বদলে ব্যবহার করতে পারেন।
  • মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের জীবাণু রোধে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজার জুড়ি নাই ।নিমের ডাল দাঁতের জন্য খুবই উপকারী।
  • নিম পাতা রোদে শুকিয়ে গুড়া করে সংরক্ষণ করতে পারেন পরে এটা ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • কাটা বা পোড়া স্থানে ও নিম পাতার রস ভালো কাজ করে।
মোটকথা নিম পাতার বা নিমের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না তবে এই নেমে রয়েছে আমাদের জন্য নানান ওষুধে গুণ। তাই আমরা প্রয়োজন মত নিমপাতা ব্যবহার করলে সমস্ত গুনগুলো থেকে অনেক উপকার পেতে পারি।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার ,খালি পেটে নিম পাতা খেলে কি কি হয় ,চর্মরোগের নিম পাতার ব্যবহার এবং ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়া ও আপনি যদি ভেষজ বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url