মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে- মাতৃ মৃত্যুর পাঁচটি কারণ কি

প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে এই বিষয় সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন। চিন্তার কারণ নেই কেননা আজকে আমার এই আর্টিকেলের মাঝে মাতৃ মৃত্যু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে মাতৃ মৃত্যুর পাঁচটি কারণ সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে।
মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে- মাতৃ মৃত্যুর পাঁচটি কারণ কি
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি মাতৃ মৃত্যু সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে ও মাতৃ মৃত্যুর পাঁচটি কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো। তাই মাতৃ মৃত্যু সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে

আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে। আমরা সকলে হয়তো মনে করি কোন বাচ্চার মা মারা গেলে তাকে মাতৃ মৃত্যু বলা হয়। কিন্তু আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সংজ্ঞা অনুসারে গর্ভকালীন অর্থাৎ প্রসবকালীন বা প্রসবের ৪২ দিনের মধ্যে গর্ভজনিত কারণে কোন নারীর মৃত্যু হলে তাকে মাতৃ মৃত্যু বলা হয়। 
তাছাড়া গর্ভকালীন বা প্রসব পরবর্তী ৪২ দিনের মধ্যে যদি অন্য কোন কারণে কোন নারীর মৃত্যু হয় তাহলে সেটা মাতৃ মৃত্যু হিসেবে ধরা হয় না। প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই উক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন যে মাতৃ মৃত্যু কাকে বলা হয়।

মাতৃ মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ কি

মাতৃ মৃত্যুর কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রথম কারণ লক্ষ্য করা যায় রক্তক্ষরণ। গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসব পরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে হাইপারটেনসিভ ডিসঅর্ডার আর তৃতীয় হচ্ছে সেপসিস। এই তিনটি হলো মাতৃ মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষ প্রধান কারণ। মাতৃ মৃত্যুর এই কারণগুলো আমাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় যদি প্রতিটা মায়ের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া যায় তাহলে এই মাতৃমৃত্যুর কারণ গুলো থেকে প্রতিটা মাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুর হার ও কমবে।

মাতৃমৃত্যুর পাঁচটি কারণ কি

মাতৃমৃত্যুর জন্য কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান কারণ হলো পাঁচটি। কারণগুলো হলঃ
  • গর্ভকালীন, প্রসবকালীন বা প্রসব পরবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ।
  • একলামশিয়া বা প্রসবকালীন খিচুনি।
  • বিলম্বিত বা বাধাপ্রস্থ প্রসব।
  • অনিরাপদ গর্ভপাত এবং
  • প্রসব পরবর্তী সংক্রমণ।

গর্ভকালীন সেবা

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং নিরাপদ প্রসব ও নবজাতকের জন্য যে নিয়মিত সেবা প্রদান করা হয় তাকে গর্ভকালীন সেবা বলা হয়।মাতৃমৃত্যুর এবং শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য গর্ভকালীন সেবা টা খুবই জরুরী। গর্ভবতী মায়েদের কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন সেবা নেওয়া প্রয়োজন।

প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবপরবর্তী মায়ের বিপদ চিহ্ন সমূহ

এই সময়ে কিছু বিপদ চিহ্ন রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক বিপদ চিহ্ন গুলোঃ
  • ব্যাথা সহ বা ব্যথা ছাড়া যে কোন ধরনের প্রসব পূর্ব রক্ত স্রাব অথবা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্ত স্রাব। প্রসবের পরে গর্ভফুল না পরা।
  • প্রসবপূর্ব, প্রসবকালে ও প্রসবের পরে শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথা ব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা।
  • প্রসবপূর্ব বা প্রসব পরবর্তী সময়ে তিন দিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব।
  • প্রসব ব্যথা ১২ ঘণ্টার বেশি থাকা প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রথমে বের হয়ে আসা।
  • প্রসবপূর্ব, প্রসবের সময়ে বা প্রসবের পরে খিচুনি হওয়া।

গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চেকআপ

গর্ভধারণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিকল্পিতভাবে সেবা দান খুবই জরুরী। প্রতিটি গর্ভবতী মাকে গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চেকআপ করা খুবই জরুরী। গর্ভবতী অবস্থায় চেকআপ করলে এতে শিশুর জন্মদান সুন্দরভাবে করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় এই চেকআপ কে বলা হয় এন্টিনেটাল কেয়ার। একটি মেয়ে যখন গর্ভবতী হয় তখন তার জীবনে একটি নতুন পরিক্রমা শুরু হয়। 
আর এই চলার পথে অনেক বাধা বিপত্তি আসতে পারে। এই বাধা গুলো অতিক্রম করে সুন্দরভাবে সন্তান জন্ম দেওয়া হচ্ছে তার জীবনের একটা সাফল্য। তাই গর্ভবতী অবস্থায় বাচ্চার জন্ম দেওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত চারবার চেকআপ করলে একটা সুস্থ সুন্দর সন্তান জন্মদান করতে একজন মা সক্ষম হবে। চলুন আমরা এবার জেনে নেই গর্ভবতী অবস্থায় চারবার চেকআপ কখন কখন করতে হবে। 

প্রথম চেকআপ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তবে চার মাসের মধ্যে। দ্বিতীয় চেকআপ ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে। তৃতীয় চেকাপ ৮ মাসে এবং চতুর্থ বা শেষ চেকআপ ৯ মাসে। গর্ভবতী অবস্থায় এই চারবার চেকআপ চেকআপ করলে মাতৃমৃত্যুর হার অনেকটা কমে আসবে তার সাথে শিশু মৃত্যুর হার ও কমবে।তাই একজন গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়া আমাদের খুবই জরুরী।

গর্ভকালীন সেবার প্রয়োজনীয়তা

গর্ভকালীন সেবার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গর্ভকালীন সময়ে সঠিক সেবা গ্রহন করলে মাতৃ মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমবে তাই আমাদের গর্ভকালীন সেবার প্রয়োজন।
  • গর্ভবতী অবস্থায় নিয়মিত সেবা নিলে মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকে।
  • মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসা পাওয়া যায়।
  • সময় মত টিটি টিকা ও আয়রন ফলিক এসিড বড়ি গ্রহণ করা যায়।
  • প্রসব পরিকল্পনা করা সহজ হয়।
  • জটিলতা ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভ চিহ্নিত করে প্রয়োজনে রেফার করা নিশ্চিত করা যায়।

মাতৃ মৃত্যুর হার কাকে বলে

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে সেই বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানবো মাতৃ মৃত্যুর হার সম্পর্কে।প্রতি এক লক্ষ গর্ভধারণে কত জন মা মারা যান সেটা মাতৃমৃত্যুর হার হিসেবে ধরা হয়।

বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর কারণ নয় কোনটি

গর্ভবতী অবস্থা থেকে শুরু করে প্রসব পরবর্তী সময়ের মধ্যে যদি কোন মা গর্ভজনিত কোন কারনে মৃত্যুবরণ করে তবে সেটা আমরা মাতৃ মৃত্যু বলে থাকি। তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে যদি কোন মা হেপাটাইটিস বি, রোড এক্সিডেন্ট, হার্ড ডিজিজ এবং অন্যান্য কারণে যদি মৃত্যুবরণ করে তবে সেটা মাতৃ মৃত্যুর মধ্যে পড়ে না। প্রিয় পাঠক আপনার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর কারণ নয় কোনটি।

প্রসব পরবর্তী পরিচর্যা কি

প্রসবের পর থেকে ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন পর্যন্ত মা ও শিশুর অবস্থা নিরূপণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে প্রসব পরবর্তী সেবা বলা হয়। জন্মের পরপর বিশেষ করে প্রথম তিন দিনের মধ্যে দুইবার প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু প্রসবকালীন সময়ে চেক আপ করলে হবে না প্রসব পরবর্তী ৪২ দিন পর্যন্ত ও যথাযথ চেকআপ প্রয়োজন।মা ও নবজাতককে চারবার প্রসব পরবর্তী সেবা দেওয়া প্রয়োজন।
  • প্রথমে জন্মের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে একবার।
  • জন্মের দুই থেকে তিন দিনে দ্বিতীয়বার। 
  • জন্মের ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে তৃতীয় বার এবং 
  • চতুর্থ ও শেষবার হচ্ছে জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে। 
প্রসব পরবর্তী সময়ে যদি মা ও নবজাতককে এই সেবা প্রদান করা হয় তাহলে তারা বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্ত থাকবে। তার ফলে মাতৃমৃত্যুর এবং শিশু মৃত্যুর হার কমবে। তাই আমরা নিয়মমাফিক এই চেকআপগুলো করে নেব। তাহলে অন্তত মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু কিছুটা কমবে।

প্রসব পরবর্তী সেবার গুরুত্ব

প্রসব পরবর্তী মা ও নবজাতকের অকাল মৃত্যুর অধিকাংশই যথাযথ এসব পরবর্তী সেবা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ-
  • নবজাতকের মৃত্যুর ৫০ শতাংশই ঘটে জন্মের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঘটে জন্মের ৭ দিনের মধ্যে।
  • মাতৃমৃত্যু বেশিরভাগই ঘটে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিচুনি, সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে। বেশিরভাগ মাতৃমৃত্যু প্রসব পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটে থাকে।
  • তাই মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষায় প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ করা খুবই জরুরী।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন মাতৃ মৃত্যু কাকে বলে, মাতৃ মৃত্যুর পাঁচটি কারণ কি,গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চেকআপ, মাতৃ মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ কি ,মাতৃ মৃত্যুর হার কাকে বলে,প্রসব পরবর্তী পরিচর্যা কি সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়া ও আপনি যদি তথ্য বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url