এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা-সম্পর্কে জানুন
ভূমিকা-এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা- সম্পর্কে জানুন
এলাচ এটা সবার রান্না ঘরেই থাকে। ছোট ছোট এই মসলা গুলো সব খাবারের সুবাস বাড়িয়ে তোলে। এটি বিভিন্ন তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ও পিঠা পায়েস এমনকি চায়ের মধ্যে ও এই এলাচ ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকে খাওয়ার পরে মুখের ভিতরে এলাচ রেখে দেন। এলাচ খুব ছোট একটি ফল কিন্তু এর গুণের শেষ নেই এবং এর উপকারিতা ও অনেক।
এলাচের প্রকারভেদ
এলাচ সাধারণ দুই প্রকার। যথা-ছোট এলাচ এবং বড় এলাচ। ছোট এলাচ যেটা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এটা আমরা বিভিন্ন মিষ্টি খাবার এবং তরকারিতে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া ও মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে ও আমরা এটা ব্যবহার করে থাকি। এই দুই এলাচের স্বাদ এবং কালার দুটোই ভিন্ন।
এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
এলাচ একটি সুগন্ধি মসল্লা। এটি খাবারে চমৎকার সুগন্ধ নিয়ে আসে। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি মসলা। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ও ভালো কাজ করে।চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এলাচের উপকারিতা গুলোঃ
- এলাচ শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যা নিরাময় ও ফুসফুসের সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- এতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লাম্যাটরি উপাদান যা শরীরের ইনফ্লেম্যাটরি মাত্রা কমায় এবং আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ। তাই খাবারের সাথে এলাচ মিশিয়ে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক থাকে। কারণ ম্যাঙ্গানিজ রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- ভরা পেটে খাওয়ার পর একটা এলাচ মুখে নিয়ে চিবালে পাকস্থলীর সমস্যা দূর হয়ে যায়। এলাচ কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজম দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- একটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে।
- দাঁতের যত্নে ও এলাচের ভূমিকা রয়েছে এটি ব্যাকটেরিয়া ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ওরাল হেলথকে সুস্থ এবং ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- কারো যদি বমি বমি ভাব হয় সেটা দূর করতে এলাচ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- বুকে কফ জমা ও সর্দি কাশির মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এলাচ।
- এলাচ দেহের ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে হজমে সহায়তা করে।
এলাচ খাওয়ার অপকারিতা
এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনারা ইতিমধ্যেই এলাচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা।যাদের মুখে দুর্গন্ধ বেশি তারা একটি এলাচ নিয়ে চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাবেন। এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। এছাড়া ও মাড়ির ইনফেকশন মুখের ঘা ও দাঁতের নানা সমস্যার সমাধান করে থাকে এলাচ।
কালো এলাচের উপকারিতা
ছোট এলাচের যেমনি উপকারিতা রয়েছে তেমনি বড় এলাচের উপকারিতা ও কম নয়। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক বড় এলাচের উপকারিতা গুলোঃ
- কালো এলাচের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে যার কারণে রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি হার্টকে সুস্থ রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- বড় এলাচের মধ্যে রয়েছে মূত্রবধ বৈশিষ্ট্য যা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, মূত্রনালির সংক্রমণ ইত্যাদির মতো রোগের উপশম করে। বড় এলাচের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি কিডনির জন্য খুবই উপকারী।
- বড় এলাচের স্বাদ একটু গরম। তাই এটা সব সময় পরিমাণ মতন সেবন করতে হবে।
খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
এলাচের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে খালি পেটে এলাচ খেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। চলুন আমরা জেনে নেই খালি পেটে এলাচ খেলে আমাদের কি কি সমস্যা দূর হয়।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এলাচ ভিজানো পানি খেলে বলিরেখা কমতে শুরু করে যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।
- মধু লেবুর রস ও গরম পানিতে একটি এলাচ মিশিয়ে পান করলে শ্বাসকষ্ট সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। তাছাড়াও হুপিং কাশি ও ফুসফুসে সংক্রমণের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
- এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে যার ফলে হাঁপানিও হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব ঠিক থাকে।
- এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস করে। এছাড়া ও এলাচে থাকা পুষ্টিগুণ মুখের ঘা সহ দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন এবং নানা রকম সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
- নিয়মিত এলাচ খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় কারণ এলাচের থাকা উপাদান গুলো দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠন করতে বাধা প্রদান করে।
- একটি ছোট বা বড় এলাচ পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেশীতে টান ধরার সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- এলাচ দিয়ে চা বানিয়ে খেলে মাথাব্যথা সহ মানুসিক সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
- এলাচে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা সর্দি-কাশি এবং ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
এলাচ জলের উপকারিতা
বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা এলাচ। এটি মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এলাচে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। চিবিয়ে খেলে যেমন আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় তেমনি এলাচ ভেজানো পানিতে ও আমাদের অনেক উপকার রয়েছে। চলুন এবার জেনে নেই এলাচ ভেজানো পানি খেলে আমাদের কি কি উপকার হয়।
- এলাচ ভেজানো পানি আমাদের প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে খেতে হবে তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে এতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত এলাচ ভেজানো পানি খেলে উপকার পাবেন।
- এলাচ ভেজানো পানি শরীরের দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে ওজন কমাতে ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে এই পানি।
- নিয়মিত সকালে খালি পেটে এই পানি খেলে ত্বক টানটান হবে, বলিরেখা কমে যাবে এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমতে শুরু করবে।
- রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়ায় এই পানি। যার ফলে রক্ত জমাট বাধার সমস্যা কিছুটা কমে।
- নিয়মিত এলাচ ভেজানো পানি খেলে দাঁতের গোড়ার নানা রকম সংক্রমণ ও কমে।
- এলাচে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টের জন্য অনেক উপকারী। তাই যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন একটি করে এলাচ খেতে পারেন।
- শীতের সময় প্রতিদিন এলাচ ভেজানো পানি খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ও সর্দি কাশি নিরাময়ে এলাচ এর পানি খুবই উপকারী।
- প্রতিদিন এলাচের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। ফলে পেটের নানা রকম সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
- এলাচ খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এলাচের সুগন্ধ মস্তিষ্ককে সতেজ করে ও শান্ত রাখে। এজন্য প্রতিদিন এলাচ পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়বে ও ডিপ্রেশন দূর করবে।
- এলাচে থাকে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা এলার্জি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- এলাচের পানি নিয়মিত খেলে শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- এলাচ ভেজানো পানি নিয়মিত খেলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়।
রাতে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
রাতে এলাচ খেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এলাচের গুড়া মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কয়েকদিন খাওয়ার পরে গলা ব্যথা সেরে যায়। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এলাচ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে এটি সাহায্য করে। এছাড়া ও যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের রাতে দুধের সাথে এলাচ খেলে ঘুমের সমস্যা দূর হয় এবং ভালো ঘুম হয়।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এলাচ খাওয়া যাবে কিনা
একজন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এলাচ খাওয়ার কোন পরামর্শ দেওয়া হয় না।কারণ এলাচ জড়ায়ুকে উদ্দীপিত করে যার ফলে জড়ায়ুর সংকোচন হতে পারে এবং এর ফলে গর্ভপাত হতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় এলাচ খাওয়া একেবারে উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ গরম ভাতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা
এদিকে যে মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের ও এলাচ খাওয়া উচিত নয়। কারণ মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে এলাচের সমস্ত যৌগ গুলো শিশুর কাছে যেতে পারে। সুতরাং প্রিয় পাঠক বুঝতে পারছেন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং দুগ্ধ দানকারী মায়েদের জন্য এলাচ মোটেই নিরাপদ নয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতেও বুঝতে পেরেছেন এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা,এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ,সাদা এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ,কালো এলাচের উপকারিতা ,খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা ,এলাচ জলের উপকারিতা ও রাতে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্য এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়াও আপনি যদি তথ্য বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url