জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি কি আপনি কি জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন জাম সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেল থেকে জামের বিচির গুড়া খাওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি জামের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন। তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন জাম সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা-জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
জাম গ্রীষ্মকালীন একটা ফল। এটা খুব কম সময়ের জন্য পাওয়া যায়। এই মৌসুমী ফল জুন,জুলাই বা আগস্ট মাসের যেকোন সময়ে পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে অনেক ঔষধি বৈশিষ্ট্য। এর রংটা খুব ভালো লাগে।
বেগুনি কালো রঙের এই ফল মিষ্টি- টক স্বাদের হয়। এই জন্য অনেকের কাছে এটা খুব প্রিয় একটা ফল।এটায় ক্যালরি খুব কম থাকে। তবে এতে রয়েছে বিশেষ পুষ্টিগুণ। শুধু ফল নয় এর বীজ, পাতা, ছালে ও রয়েছে অনেক ওষুধিগুণ।এই সিজনে এটা খুব সহজ লক্ষ্য আমাদের বাংলাদেশে।
জাম ফলের বৈশিষ্ট্য
জাম এর পুষ্টিগুণের যেমন শেষ নেই তেমনি এর রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্য।জাম ফলের বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ
- এটি মৌসুমী ফল এবং খুব কম সময়ের জন্য এটা বাজারে আসে।
- প্রায় সব এলাকায় জাম পাওয়া যায়।
- এটা আকারে গোলাকার ও বেগুনি রঙের হয়।
- জাম গ্রীষ্ম মৌসুমের মুখরোচক একটি ফল।
- কিছু জাম ছোট আকারের ও হয় যাকে খুদে জাম বলা হয়।
জামের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
জামের পুষ্টিগুণের শেষ নেই। সমস্ত কিছুতে রয়েছে পুষ্টি আর ওষুধি গুণ। জাম ফল থেকে জামের বীজ সমস্ত কিছুতে রয়েছে মানবদেহের জন্য উপকারীতা। আমরা সকলে হয়তো জানি না জামের পুষ্টিগুণ, জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেঃ
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকরী জামে থাকা এন্টি ডায়াবেটিক প্রপার্টিজ এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে যা শরীরের চিনি ও স্টার্চ কে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা হয়তো অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম কতটা উপকারী। তাছাড়া জামের বীজ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ কুষ্টিয়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে
জামে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং জামের মৌসুমে প্রতিদিন পরিমাণ মতো জাম খেলে আমাদের খুবই উপকার হবে।
ইনফেকশন দূর করে
জাম এ রয়েছে কিছু যৈব উপাদান। তাছাড়া এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রপার্টিজ আছে। এটা শরীর থেকে টক্সিন ও ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
জন্ডিস ও অ্যানিমিয়া নিরাময় করে
জামে থাকা আয়রন শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং জন্ডিস নিরাময় করতেও সহায়তা করে। সেজন্য রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুব উপকারী।
ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
জামে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাধারণ ফ্লু এর বিরুদ্ধে শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে। এটা স্কিনের জন্য ও উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
এটি ক্যান্সার কোষ কে প্রিভেন্ট করে। জাম ফ্রি রেডিকেলসকে নিউট্রিলাইজ করতে ও ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জটিলতা কমায়
জাম ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।শুধু জামে নয় জামের পাতা ছাল এবং বীজ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী।জামের বীজে রয়েছে এন্টি ডায়াবেটিক এলিমেন্ট।
হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
জাম রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। জামে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ও এতে থাকা পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে এবং হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
জামে রয়েছে বিভিন্ন পুস্টিগুণ ও উপকারিতা। এদিকে জামের বিচির উপকারিতা ও কম নয়। চলুন জেনে নেই জামের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে। প্রায় ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। আর ডায়াবেটিসের সমস্যা মানেই নানান রকম রোগের উৎপত্তি। ডায়াবেটিস এর সমস্যা হলে ধীরে ধীরে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে,আর সেই সাথে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যা ও।
তাই সুস্থ থাকতে হলে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এই গরমের সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন খেতে পারেন জাম।জাম রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আর জাম এর শাঁসের থেকে বেশি উপকারী হচ্ছে জামের বীজ। জামের বীজ খাবারের থাকা স্ট্যাচকে ভেঙ্গে দেয়। যার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে।
জামের বীজ এ থাকে জাম্বোলিন। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেজন্য প্রতিদিন জাম খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়বে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই ছোট থেকে নিয়মিত জাম খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। এছাড়া জামের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন জামের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে।
জামের বিচির অপকারিতা
জামে রয়েছে ভিটামিন বি১ বি২ বি৩ বি৬ ও ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।জাম, জামের বিচি, ছাল এতে কোন অপকারীতা নেই।এতে রয়েছে শুধু উপকারী বৈশিষ্ট্য।
জামের বিচি পাউডার করার নিয়ম
জামের বিচি পাউডার করার কিছু নিয়ম রয়েছে নিয়মগুলো হলঃ
- প্রথমে জামের বিচিগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে বিচির গায়ে কোন শাঁস না থাকে।
- এখন এগুলো রোদে শুকাতে হবে কিছুদিন।
- রোদ্রে শুকানোর পরে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের সবুজ অংশ বের করে নিতে হবে।
- সবুজ অংশগুলো হাত দিয়ে একটু ভেঙে নিতে হবে।
- তারপর আবার কয়েকদিন রৌদ্রে শুকাতে হবে।
- শুকনো হয়ে গেলে এগুলো ব্লন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেকে নিতে হবে।
- এখন এগুলো একটা কাচের যারে রেখে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে হবে।
জামের বিচির গুড়া খাওয়ার নিয়ম
জামের বিচিতে বিদ্যমান ডায়াবেটিস প্রপার্টিস যা রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যা শরীরের চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে শক্তি যোগান দেয়। জামের বিচি গুড়া খাওয়ার নিয়ম হলো -এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বিচির গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত এটা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং জামের বিচির গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্য। আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন।
আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করুন। এছাড়াও আপনি যদি তথ্য বিষয়ক আরো জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url