আমাশয়ে বেলের উপকারিতা-সম্পর্কে জানুন

আপনি কি আমাশয়ে বেলের উপকারিতা এই বিষয় সম্পর্কে গুগলে খোঁজাখুঁজি করছেন চিন্তার কারণ নেই। কেননা আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা, কাঁচা বেলের উপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। তাই আমার আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন আমাশয়ে বেলের উপকারিতা সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো।
আমাশয়ে বেলের উপকারিতা-সম্পর্কে জানুন
পোস্ট সূচিপত্রঃএখানে শুধু আমাশয়ে বেলের উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয় নাই। এছাড়াও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময় গর্ভাবস্থায় বেলের শরবতের উপকারিতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা-আমাশয়ে বেলের উপকারিতা

বেল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এই ফলটি ছোট বড় সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত এবং এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বোত্তয় বেল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। বেল গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে।আর পরের বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বেল পাকা শুরু হয়। প্রায় এক বছর সময় লাগে বেল পাকতে।

বেলের পুষ্টিগুণ

বেল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটা আমাদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মধ্যে মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেল কাঁচা পাকা দুই ভাবে আমরা খেতে পারি। কাঁচা বেল ডায়রিয়া এবং আমাশয় রোগের জন্য খুবই উপকারী। বেল আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে নানান পুষ্টি ও ভেষজ উপাদান। পেটের সমস্যাই বেল খুবই উপকারী। কারো কারো মতে পাকা বেলের চেয়ে কাঁচা বেল বেশি উপকারী এবং পুষ্টিগুনে ভরা। বেল খেলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এটা রক্ত আমাশাতেও ভালো কাজ করে। বেল পেট ঠান্ডা রাখে। গরমের সময় পরিশ্রমের পর বেলের শরবত খেলে ক্লান্তি দূর হয়। বেলে থাকা ভিটামিন এ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলোর পুষ্টি যোগায়। এর ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেলের শাঁস পিচ্ছিল বলে এটা পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী। তাই খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। এজন্য কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। বেলে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা মুখের ব্রণ সারাতে ও সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালের অনেক রোগ বলাই থেকে দূরে রাখে।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেলের পুষ্টি উপাদান
  • পানি                ৭৭.৫ গ্রাম
  • খাদ্য শক্তি        ১৪০ কিলোক্যালরি 
  • আমিষ        ‌     ২.৬০ গ্রাম
  • শর্করা               ৩১.৮ গ্রাম
  • ভিটামিন এ       ৫৫ মিলিগ্রাম
  • খনিজ পদার্থ     ১.৭ মিলিগ্রাম
  • আঁশ                ২.৯ গ্রাম
  • চর্বি                  ০.২ গ্রাম
  • ভিটামিন বি ১    ০.১৩ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি ২ ‌  ০.১৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি       ৬০ মিলিগ্রাম
  • টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম         ৩৮ মিলিগ্রাম
  • লৌহ                  ১.১ মিলিগ্রাম।

বেল পাতার বৈশিষ্ট্য

বেল পাতাতে রয়েছে কিছু উপকারী উপাদান। বেল পাতা নিয়মিত সেবন করলে অনেক রোগের উপশম হয়। বেলের মত বেল পাতাতেও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৬,ক্যালসিয়াম ও ফাইবার এর মত কিছু উপকারী উপাদান। তাই নিয়মিত বেলপাতা খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হবে।
  • বেল পাতাতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সহায়তা করে।
  • প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুইটা বেল পাতা চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে খেলে গ্যাস আর বদ হজমের মত পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।বেল পাতাতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা হজম প্রক্রিয়াকে হজমে সহায়তা করে। এর ফলে গ্যাস ও এসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
  • প্রতিদিন সকালে বেল পাতা হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 
  • বেল পাতার উপাদান গুলো কোলেস্টেরল ও ব্লাড প্রেসার কমায়। 
  • এই গরমের দিনে প্রতিদিন এক থেকে দুইটি বেলপাতা চিবিয়ে খান তাহলে রোদে শরীরে অস্বস্তি ভাব লাগবে না এবং গরমও কম লাগবে। 
  • এতে রয়েছে এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান। বেল পাতা নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কন্ট্রোল রাখা সম্ভব তাই নিয়মিত বেলপাতা খান। আর রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

বেলের উপকারিতা

বেলের উপকারিতা শেষ নেই।বেলের পাতা হতে ফল পর্যন্ত সমস্ত কিছুতেই রয়েছে শুধু পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। হাঁপানি, জন্ডিস, আমাশয়, রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, মাড়ির রক্তপাত, সর্দি জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্ত রোগের চিকিৎসা এই বেল গাছের মধ্যে রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বেলের উপকারিতা গুলোঃ
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারণে ত্বকের যে দাগ হয় সেটা দূর করতে বেলপাতা সাহায্য করে।
  • বেল পেট পরিষ্কার রাখে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • পাকা বেলের শাঁস এ ফাইবার রয়েছে যা আলসার উপশমে কার্যকরী।
  • বেলের পাতা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে আলসার অনেকটা কমে আসবে।
  • পাকা বেলে মেথানল নামের একটি উপাদান রয়েছে যা ব্লাড সুগার কমাতে কাজ করে। এখানে বেল শরবত নয় এমনিতেই বেল খেতে হবে। যার ফলে ডায়াবেটিস কমবে।
  • ব্লাড প্রেসার কমাতে বেল সাহায্য করে। ব্লাড প্রেসার কমানোর জন্য বেলের শরবত অথবা পাকা বেল এমনি খেতে পারেন।
  • বেলে থাকা এন্টি প্রলেফিরেটিভ ও এন্টি মুটাজেন উপাদান যা ক্যান্সার সৃষ্টিতে বাধা দেয়।
  • নিয়মিত বেল খেলে আর্থ্রারাইটিস এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • বেল পাতার রস গোল মরিচ ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে জন্ডিস রোগে নিরাময় হয়।
  • বেল পাতার রস শিশুর স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
  • বেল একটি পুষ্টিকরি ফল। কাঁচা পাকা দুটোতেই সমান পুষ্টি রয়েছে। আমাশয়ে জন্য আধাপাকা সিদ্ধ বেল অধিক কার্যকরী। বেলের শরবত হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে বল বৃদ্ধি করে।
  • বেল পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও জ্বালা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  • বেল পাতার জুস চুলের সমস্যা দূর করে।
  • নিয়মিত বেল খেলে কিডনি ভালো থাকে।
  • এতে থাকা এন্ট্রি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যক্ষা রোগ সারাতে সহায়তা করে। পাকা বেল এর শরবতের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটানা ৪০ দিন খেলে যক্ষা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • বেলে থাকা বিটা ক্যারোটিন যা লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আমাশয়ে বেলের উপকারিতা

আমাদের শরীরে বেলের উপকারিতা অনেক।আর আমাশয়ে বেলের উপকারিতার জুরি নেই।বেলের শরবত শরীরকে ঠান্ডা রাখে। বেলের উপকার পেতে কাঁচা পাকা উভয় খেতে পারেন। তবে আমাশয় রোগের জন্য বেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেল হজম শক্তিতে সহায়তা করে। 

মূলত হজমের সমস্যার কারণে আমাশা হয়ে থাকে।এজন্য আমাশয়ের রোগীদের হজমের সমস্যা দূর করতে বেল খাওয়া জরুরী। আধা পাকা বেল সিদ্ধ করে খেলে আমাশা রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক আপনার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমাশয়ে বেলের উপকারিতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেরই ধারণা খালি পেটে ফল খেলে এসিডিটির প্রবলেম হয়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। খালি পেটে ফল খেলে শরীরে উপকারী এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।বেল একটি পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে নানান ওষুধি গুণ। যেটা আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে। 

খালি পেটে বেল খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যার দূর করার জন্য বেল খুবই উপকারী এছাড়াও বেলে থাকা ফাইবার আলসার উপশমে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও বেলের গুরুত্ব অপরিসীম। বেল আমাদের শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। 
১০০ গ্রাম বেলে রয়েছে ১৪০ ক্যালরি অ্যানার্জি। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ও বেলের গুরুত্ব কম নয়। বেল ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। খালি পেটে বেল খাওয়ার কার্যকরীতা অনেক।

বেল পাতার রস খেলে কি হয়

বেল পাতার রস খেলে শরীরে নানা রকম উপকার হয়। বেল পাতার রস নিয়মিত খেলে শরীরের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেলপাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটা নিয়মিত খেলে শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে। এটা শরীরকে শীতলতা প্রদান করে। বেল পাতার রস তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বেল পাতার রসের সঙ্গে সামান্য তুলসী পাতার রস ও আদার রস মিশিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বেল খেলে ক্লান্তি দূর হবে এবং রক্ত পরিশুদ্ধ হবে,শরীর ঠান্ডা থাকবে। বেলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা গর্ভের সন্তানের মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।

গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা 

গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া নিরাপদ। তবে বেশি পরিমাণ বেল না খাওয়াই ভালো। পরিমাণ মতো বেল খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিনা।

বেলের অপকারিতা

প্রতিটা জিনিসেরই খারাপ এবং ভালো দিক উভয় রয়েছে। তাই বেলের যত পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া ঠিক নয়। পাকা বেল দীর্ঘদিন খাওয়া ঠিক নয়। এটা দীর্ঘদিন খেলে অন্ত্রের ছিদ্র হতে পারে। 
কিন্তু কাঁচা বেলে এ ধরনের কোন বিপদের আশঙ্কা নেই। বেল উপকারী হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য বেল খাওয়ার পরিমাণ ঠিক রেখে নিয়ম মত খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন আমাশয়ে বেলের উপকারিতা,বেলের পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া যাবে কিন্‌ বেল পাতার রস খেলে কি হয়, খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিত্‌ বেল পাতার বৈশিষ্ট্য এই সকল বিষয় সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। 

আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।

এছাড়া ও আপনি যদি তথ্য বিষয়ক আরো কিছু জানতে চান তবে আমাদের বিগ স্টার ইনফো ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url