হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি-জীবনে কতবার হজ করা ফরজ-সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন। কেননা জীবনে কতবার হজ করা ফরজ হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও এর সাথে সম্পর্কিত সকল তথ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক তথ্য সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে অবশ্যই এর সমাধান পাবেনা।
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলে শুধু হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি এ সম্পর্কেই বলা হয় নাই। এছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে ও আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি হজ সম্পর্কে না জেনে থাকেন,তাহলে আমাদের এই পোষ্টটি পড়ে জেনে নিতে পারেন যাক হজ সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো।
ভূমিকা-হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
আপনি কি হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সম্পর্কে বিস্তারিত সকলকিছু। হজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটা স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে হজ।
হজ মানুষকে পাপ মুক্ত করে, তাই মহানবী (সা:) তাঁর উম্মতদের সামর্থ্য থাকলে বেশি বেশি হজ -উমরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।এ মুমিন মানুষের জীবনের স্বাদ ও জীবনের স্বপ্ন হচ্ছে হজ করা। আরবী ১২ মাসের সর্বশেষ মাস হচ্ছে জিলহজ মাস আর এ মাসে রয়েছে ইসলামের অন্যতম হজের বিধান এবং মুসলিম উম্মাহর দুটি উৎসবের একটি- ঈদুল আযহা।
হজ কি
হজ পরম করুনাময় আল্লাহর ইবাদত। বান্দার প্রতি স্রষ্টার হক।ঈমানের আলোকিত এক নিদর্শন সুতরাং হজ হচ্ছে আল্লাহর বিধান, আল্লাহর হক।হজ শব্দের অর্থ হলো' যাত্রায় যোগদান করা'যাযাত্রার বাহ্যিক কাজ ও উদ্দেশ্যের অভ্যন্তরীণ কাজ উভয়কেই বুঝিয়ে থাকে।হজের নিয়ত করে ইহরাম ধারণ করে নির্দিষ্ট দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ও কাবা শরীফ তাওয়াফ করাই হচ্ছে হজ।
স্বাভাবিকভাবে 'হজ' অর্থ মহৎ কাজের ইচ্ছে করা। আর 'ওমরাহ 'অর্থ পরিদর্শন করা। ওমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করা, এরপর তাওয়াফ ও ছাই করে মাথা মুন্ডল করে ইহারাম মুক্ত হওয়াকে ওমরাহ বলে।
হজ কাদের উপর ফরজ
হজ কাদের উপর ফরজ তা জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে অবশ্যই জানতে পারবেন হজ কাদের উপর ফরজ।সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ও মক্কায় গিয়ে হজ কাজ সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ যারা রাখে এমন প্রত্যেক মুসলমানের উপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য শর্ত হচ্ছে স্বামী বা মহরম পুরুষ সঙ্গে থাকা।
আরো পড়ুনঃ জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
হজ ইসলামের একটি স্তম্ভ। মহান আল্লাহতালা সমর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর হজ্ব ফরজ করেছেন।ইসলামী হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হযরত মুহাম্মদ(সা:) ইরশাদ করেন, 'হজ ওমরাহকারীরা হচ্ছেন আল্লাহর মেহমান। তারা যদি আল্লাহর নিকট দোয়া করেন তিনি তা কবুল করেন আর তারা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলেও তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।'
হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো:
- মুসলিম হওয়া।
- বিবেকবান হওয়া পাগল না হওয়া।
- বালেগ হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
- স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া এবং
- দৈহিক ও আর্থিকভাবে সমর্থ্যবান হওয়া।
হজ কোন মাসে হয়
হজ কোন মাসে হয় এ নিয়ে অনেক সময় আমরা গুগলে খুজে থাকি।আরবি জিলহজ মাসে হজ পালিত হয়। এটা আরবি মাসের শেষ মাস। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও পূণ্যময়। এই দশ দিন ইবাদত ও আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহতালা চারটি মাসকে পবিত্র ও সম্মানিত করেছেন। এই চারটি মাসের মধ্যে জিলহজ মাসও রয়েছে।
জিলহজ মাস একটি ফজিলত পূর্ণ মাস। রাসূল (সা:) বলেন -'আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশদিনের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্য কোন দিনের আমল নেই এ দিনগুলোর মধ্যে একদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং একরাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদততুল্য।'
হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
কোন সামর্থবান ব্যক্তির দৈনিক খরচ বাদে হজে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তথা যাওয়া আসা সেখানে থাকা খাওয়া পরিমাণ মতো টাকা থাকলে ব্যক্তির উপর হজ করা ফরজ হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে যাকাত ফরজ না হলেও তার উপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো যাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবে সঙ্গে আর হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে।হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি। যেমনঃ
- মুসলিম হওয়া।
- বিবেকবান হওয়া পাগল না হওয়া ।
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ।
- আজাদ বা স্বাধীন হওয়া ।
- দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।
কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়
প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান নর নারীর উপর হজ্ব ফরজ।তবে কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় সেটা ও আমাদের জানতে হবে।হজ করতে হলে একটা মানুষের পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এই পাঁচটি শর্ত যাদের মাঝে রয়েছে তাদের উপরে হজ্ব ফরজ। যেমন: মুসলমান হওয়া, বিবেকবান হওয়া, স্বাধীন হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া এবং দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।
মোটকথা হজ করার জন্য সেই পরিমাণ টাকা প্রয়োজন যা দিয়ে মক্কায় যাওয়া আসা এবং থাকার খরচ টুকু করতে পারে। ঋণ থাকলে এবং যে টাকা জমা আছে তা দিয়ে ঋণ ও হজ দুটো আদায় করতে না পারলে হজ হবে না। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন এর চাইতে বেশি অর্থ সম্পদ থাকলে তার জন্য হজ ফরজ।
হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি
আমরা এখন জানব হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি সেই সম্পর্কে। হজ এর ফরজ হচ্ছে তিনটি আর ওয়াজিব হচ্ছে ছয়টি। হজের ফরজ হচ্ছে তিনটি। যেমন:
- ইহরাম বাঁধা।
- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
- তাওয়াফে জিয়ারত করা।
হজের ওয়াজিব কাজ ছয়টি। যেমন:
- জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো সময়ে মুজদালিফায় অবস্থান করা।
- সাফা মারওয়াই সাতটি দৌড়। এটিকে শায়ি বলা হয়। দৌড় শুরু হবে শাফা থেকে আর শেষ হবে মারওয়ায়।
- শয়তানকে পাথর মারা।
- তামাত্তু ও কিরান হজ কারীদের দমে শুকর বা হজের কোরবানি করা।
- হারাম শরীফের সীমানায় কোরবানির দিনগুলোতে মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা।
- বিদায়ী তাওয়াফে করা।
হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব ছারাও হজের কিছু সুন্নত রয়েছে।সেগুলো হলোঃ
হজের সুন্নত সমূহ
- ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা ওযু করার এবং শরীরে সুগন্ধি মাখা।
- নতুন বা পরিষ্কার চাদর পরা। সাদা হওয়া উত্তম।
- ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা।
- বেশি বেশি তালবিয়া পড়া।
- মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজে ইফরাদ বা কিরান করাকালীন তাওয়াফে কুদুম করা।
- মক্কায় থাকাকালীন বেশি বেশি তাওয়াফ করা।
- 'ইজতিবা' করা। অর্থাৎ তাওয়াফ আরম্ভ করার আগে চাদরের এক দিককে নিজের ডানবাহুর নিচে রাখা এবং অপরদিকে বাম কাঁধের উপর পেঁচিয়ে দেওয়া।
- তাওয়াফের সময় 'রমল' করা রমলের পদ্ধতি হলো তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় ঘন ঘন কদম ফেলা এবং উভয় কাঁধ হেলাতে হেলাতে চলা।
- ছাঈ করার সময় উভয় মিলায়নে আখরাইনের মধ্যখানে জোরে হাটা।(পুরুষদের জন্য)।
- তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া। চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত উঁচিয়ে ইশারা করে হাতে চুমু দেওয়া।
- কোরবানির দিন সমূহে মিনায় রাত যাপন করা।
জমি থাকলে হজ ফরজ কিনা
হজ এ যাওযার আগে আমাদের অবশ্যই হজ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে।আবার জমি থাকলে হজ ফরজ কিনা সেই বিষয়ে ও জানতে হবে।এক ব্যক্তির কাছে টাকা নাই কিন্তু জমি আছে, যা বিক্রি করলে তার উপর হজ ফরজ হয়। যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন নেসাবের শর্ত আছে হজের ক্ষেত্রে এরকম নয়।
হজ করা ফরজ তাদের উপর যারা বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাওয়া আসা এবং খরচাদির ব্যবস্থা করতে পারবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন- মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে,তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ।
জীবনে কতবার হজ করা ফরজ
হজ হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।জীবনে কতবার হজ করা ফরজ তা আমাদের সঠিকভাবে জানা জরুরী।চলুন জেনে নেই জীবনে কতবার হজ করা ফরজ।প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনে একবার হজ করা ফরজ। যদি তারা শারীরিকভাবে সুস্থ এবং আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। হজের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা ও সফর বা ভ্রমন করা।
রাসূল (সাঃ)বলেছেন প্রকৃত হজ্জের পুরস্কার বেহেস্ত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা হজ পালন করবেন আল্লাহ তাদের হজ কবুল করবেন এবং তাদের জন্য অফুরন্ত রহমত বরকত প্রদান করবেন।রাসূল (সাঃ) বলেন হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে যেভাবে লোহার উপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।
তাই সমর্থ্য অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেক মুসলিমদের জীবনে একবার ফরজ হজ্ব করা অতি উত্তম। তবে যাদের সমর্থ্য আছে তারা প্রতিবছর হজ করতে পারেন। তবে একবার ফরজ হজ করলে পরবর্তীতে যতবার হজ করবেন সেটা নফল হবে।
লেখকের মন্তব্য
হজ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি, জীবনে কত বার হজ করা যাবে জীবনে কতবার হজ করা ফরজ আরো এ সম্পর্কে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি উপরের উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ গ্রীষ্ম কালে কি কি উৎসব হয়
এতক্ষণ আমাদের সংগে থেকে সমস্ত পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন। আর পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পোস্টটি শেয়ার করুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url