প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায়-সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক আপনি কি প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায় এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন। প্রস্রাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। এই সম্পর্কে যদি সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায়-সম্পর্কে জানুন
পোষ্ট সূচিপত্রঃএই আর্টিকেলে প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায় সম্পর্কেই বলা হয় নাই। এছাড়াও এখানে প্রস্রাবে ইনফেকশন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে ও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা-প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায়-সম্পর্কে জানুন

শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের করে দেওয়ার কাজ করে মূত্রনালী। কিন্তু কোন কারনে যদি সেই মূত্রনালীতে ইনফেকশন হয় তাহলে আমরা বলি প্রস্রাবে ইনফেকশন। যাকে মেডিকেল ভাষায় বলে(UTI) ইউরিনারী ট্রাক্ট ইনফেকশন। চারটি অঙ্গ যেমন কিডনি, মূত্রথলী, মূত্রাশয় এবং মূত্রনালী এর যে কোন একটিতে সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। যার ফলে পেটে ব্যথা জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। প্রায় গর্ভবতী মহিলাদের এই সমস্যাগুলো বেশি হয়।

প্রস্রাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে নানা রকম লক্ষণ দেখা যায় লক্ষণগুলো হলোঃ
  • তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা
  • স্বাভাবিকের চেয়ে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া
  • বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা
  • অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • হঠাৎ প্রস্রাবের বেগ আসা
  • প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া
  • জ্বর আসা বা গা গরম হওয়া।
  • ক্লান্তি ও বমি বমি ভাব।

প্রসাবে ইনফেকশন এর কারণ

পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রস্রাবে বেশি ইনফেকশন হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রস্রাবে বেশি ইনফেকশন হয়। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। তাই প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে কারণগুলো হলঃ
  • নারীদের যৌনাঙ্গের গঠনের কারণে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়।
  • নারীদের মূত্রদ্বার এবং মলদ্বার কাছাকাছি থাকা ও প্রস্রাবে ইনফেকশনের জন্য দায়ী।
  • নারীরা বিভিন্ন জায়গায় কমন টয়লেট ব্যবহারের ফলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে।
  • প্রস্রাব আটকে রাখা ও প্রস্রাবে ইনফেকশনের জন্য দায়ী।
  • পায়খানার জীবাণু মূত্রনালী দিয়ে মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করলে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে
  • সঠিক ভাবে সেনেটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে না পারলে।
  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো না রাখলে।
  • গর্ভবতী হলে।
  • নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে।
  • মেনোপজ হয়ে গেলে।

বারবার ইউরিনে ইনফেকশন কেন হয়

মানুষ যে পানি খায় তা কিডনির মাধ্যমে ছেকে মূএনালী দিয়ে মূএ হিসাবে বের হয়ে যায়। প্রতিটা মানুষের দুইটা কিডনি দুটো ইউরেটার একটি ইউরিনারি ব্লাডার এবং ইউরেথ্রা এগুলো নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। এই মূত্রতন্ত্রের যেকোনো একটি অংশ যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তাহলে তাকে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বলে। 
এই ইনফেকশন অনেক কারণে হতে পারে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে এই ইনফেকশন হয়। ব্যাকটেরিয়া বাইরে থেকে যৌনাঙ্গের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে যার ফলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। বারবার ইউরিনে ইনফেকশন হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে কারণগুলো হলঃ
  • সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি না খেলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। এতে শরীরের উপর বেশ প্রভাব পড়ে। কারণ শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব পূরণ না হলে হতে পারে প্রস্রাবে ইনফেকশন।
  • গোসল করার পরে কিংবা প্রস্রাব করার পরে গোপনাঙ্গ ঠিকমতো পরিষ্কার করতে হবে এবং গোপনাঙ্গ যেন ভেজা না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। ভেজা জায়গায় ব্যাক্টোরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। সেখান থেকেও প্রস্রাবের ইনফেকশন হতে পারে।
  • সহবাস করার পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া উচিত তা না হলে এখান থেকেও হতে পারে প্রস্রাবের ইনফেকশন এবং নানা রকম সমস্যা।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এর ঝুঁকি বেশি, যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। কারণ রক্তের চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন হলে কি খাওয়া উচিত

প্রস্রাবে বা ইউরিনে ইনফেকশন হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে।যার ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। জাম খেতে পারেন, কারণ জাম ব্যাকটেরিয়াকে শরীর থেকে বের করাতে সাহায্য করে। দই খেতে হবে,দই এ থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে বের করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়

গর্ভাবস্থায় প্রায় মহিলাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন দেখা দেয়। এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, স্বাস্থ্যবিধিগুলো হলঃ
  • গর্ভাবস্থায় প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
  • ঘনঘন প্রস্রাব করতে হবে।
  • নিয়মিত হাত পরিষ্কার করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের বৃদ্ধি এবং প্রসারনের কারণে শরীরের পরিবর্তন হয়। সেই কারণে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায়

প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেগুলো হলঃ
  • প্রচুর পানি পান করতে হবে যার ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
  • শসা খেতে পারেন। শসাতে রয়েছে প্রচুর পানি।
  • তলপেটে গরম ছেঁক নিন। এতে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও তলপেটে ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
  • সপ্তাহে একদিন করে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমবে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • আনারস খেতে পারেন আনারস খেলে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন রোগীদের উপকার হবে।

প্রসাবে ইনফেকশনের প্রতিরোধ

এটা প্রতিরোধ করতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে নিয়মগুলো হলঃ
  • টয়লেটে টিস্যু ব্যবহারের সময়ে সামনে থেকে পেছনে পরিষ্কার করুন।
  • যৌনাঙ্গ শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন।
  • পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন।
  • প্রস্রাব করার সময় মূএথলি সব সময় সম্পূর্ণ খালি করুন।
  • সহবাসের আগে ও পরে যৌনাঙ্গ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • সহবাসের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্রাব করুন।
  • পাতলা ঢিলে ঢালা সুতির কাপড় পরিধান করুন।
  • প্রস্রাবের বেগ আসার সাথে সাথে প্রস্রাব করুন।
  • কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
উপরোক্ত নিয়মগুলো যথাযথভাবে পালন করলে প্রস্রাবের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন ,প্রস্রাবে ইনফেকশন দূর করার উপায়, প্রস্রাবে ইনফেকশন এর লক্ষণ, প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ ও গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয় সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। 

আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়ের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। 

এছাড়াও আপনি যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url