বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
প্রিয় পাঠক, আপনি কি বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। কেননা আমরা এই আর্টিকেলের মাঝে বড়দের ডায়রিয়া এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার এবং ডায়রিয়া সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আপনি যদি ডায়রিয়া সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃআর্টিকেলের মাঝে শুধু বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সেই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয় নাই। এখানে ডায়রিয়া সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন তথ্য নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা-বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
দিনে তিন থেকে চার বার পায়খানা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি হয় পানির মতো পাতলা তাহলে তাকে ডায়রিয়া বলা হয়। এটা মূলত খাদ্য ও অপরিস্কার হাত ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। যারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে তাদেরকে ডায়রিয়ার জীবাণু সহজেই আক্রমণ করে।
ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই সঠিক সময়ে এর সুচিকিৎসা করা প্রয়োজন। তা না হলে পানিশূন্যতার জন্য রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগলে অপুষ্টি দেখা দেয়।
ডায়রিয়া কি
দিনে তিন থেকে চার বার বা তার অধিক বার পাতলা পানির মত পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। এটা গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল সংক্রমণের একটি উপসর্গ। বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবীর কারনে ডায়রিয়া হয়। এছাড়াও অন্যান্য কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
ডায়রিয়া হলে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো বোঝার কিছু উপসর্গ রয়েছে সেগুলো হলঃ
- পেট ব্যথা
- মল আঁশটে দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া
- মুখের ভেতরে শুকিয়ে যাওয়া
- জ্বর
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- হঠাৎ হঠাৎ মলের বেগ আসা
- মলের সাথে রক্ত দেখা দিতে পারে
- খনিজ লবনের অত্যাধিক ক্ষতির কারণে কোমা দেখা দেয়।
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডায়রিয়ার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যেতে হবে।
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ কি
বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া দেখা দেয় কারণগুলো হলঃ
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- পরজীবী সংক্রমণ
- দূষিত পানি পানের কারনে
- শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে
- খাবারের এলার্জির কারণে ও হতে পারে
- হজম শক্তি হ্রাস পেলে হতে পারে
- কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য ও হতে পারে
- রোটা ভাইরাস এবং নোভা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে
এছাড়াও কতকগুলো রোগ জীবাণু খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে । আমাদের দেশে সচরাচর ডায়রিয়া সৃষ্টি করার রোগ জীবানুর মধ্যে রয়েছে ভাইরাস-রোটা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই, সিগেলা,ভিবরিও কলেরা ইত্যাদি।
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি আপনি কি এটা জানতে চাচ্ছেন তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে।
- খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি করে তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, চিড়ার পানি ইত্যাদি খেতে হবে।
- ভাতের মাড় ও খাওয়াতে পারেন।
- রোগীকে কোন প্রকার পানীয় বা ফলের রস খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
এতে কোন উন্নতি না হলে দ্রুত কাছের কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
ডায়রিয়ার জটিলতা গুলো কি কি
ডায়রিয়া অনেক সময় নিজে থেকেই সেরে যায়। কিন্তু কিছু কিছু সময় এটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং গুরুতর জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে যেমনঃ
- ডিহাইড্রেশন
- প্রস্রাব কম হওয়া
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
- তীব্র বমি বমি ভাব
- ক্রমাগত বমি হওয়া
- হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া
- মাথাব্যথা
- মাথা ঘোরা
- মুখের ভেতরে শুকিয়ে যাওয়া
- তন্দ্রা
- ক্লান্তি
- চোখ দেবে যাওয়া
- নেতিয়ে পড়া
- ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা
- কিডনি ফেইলিওর
- অঙ্গের ক্ষতি
ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়
ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদের চলাফেরা খাদ্যাভাস এগুলো পরিবর্তন করা জরুরি। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই নিম্নলিখিত নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে
- নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
- রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর খোলাখাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- পায়খানা করার পরে ভালো ভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- বাচ্চার পায়খানা পরিষ্কার করার পরেও হাতে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধ
ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে এর প্রতিরোধ প্রয়োজন। কয়েকটি নিয়ম সঠিকভাবে পালন করলে এর প্রতিরোধ সম্ভব নিয়ম গুলো হলঃ- খাওয়া ও রান্নার জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
- বাঁশি পঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন।
- খাবার ভালোভাবে রান্না করে গরম গরম খাবার খেতে হবে।
- আধা সিদ্ধ কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলুন।
- হাত সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
- খাবার খাওয়ার পরে অবশিষ্ট খাবার ফ্রিজে রাখুন।
- চা কফি ওই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
ডায়রিয়া রোগের প্রতিকার
ঘরোয়া ভাবে ডায়রিয়া রোগের প্রতিকার করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই সেগুলো
- ডায়রিয়ার সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি খুব কার্যকরী।
- ঘুম কম হলে শরীরের উপরে একটা খারাপ প্রভাব ফেলে তাই প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো দরকার।
- মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়া।
- হলুদের রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। সেজন্য দুধের সাথে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন, কারণ এটাতে যে প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা ডায়রিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। এটা পেটের যাবতীয় রোগের জন্য উপকারী।
- ডায়রিয়া নিরাময়ের জন্য আপনার ডায়েটে কলা,আতপ চালের জাউ অন্তর্ভুক্ত করুন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন বড়দের ডায়রিয়া হলে করণীয় কি, ডায়রিয়া থেকে মুক্তির উপায়, ডায়রিয়ার লক্ষণ ও ডায়রিয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
এছাড়াও আপনি যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url