বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য-সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক আপনি কি বেদানা লিচু বৈশিষ্ট্য এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন বেদানা লিচু সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। সেই সাথে আজকের আর্টিকেল থেকে লিচু কোন মাসে পাকে এই সম্পর্কেও জানতে পারবেন। 
বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য-লিচু কোন মাসে পাকে
পোষ্ট সুচিপত্রঃআপনি যদি লিচু সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন লিচু সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা-বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য-সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

লিচু সুস্বাদু ও টক মিষ্টি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি উৎপাদিত হয়। লিচুর কয়েকটি জাত রয়েছে। যেমন : চায়না লিচু, বোম্বাই লিচু, বেদানা লিচু। লিচু ফল খুব অল্প সময়ের জন্য আসে। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই একমাস এটি বাজারে পাওয়া যায়। লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। লিচু আমাদের জন্য যেমন উপকারী তেমনি লিচু ফুলের মধু ও আমাদের জন্য খুব উপকারী।

লিচু গাছের বৈশিষ্ট্য

লিচু গাছ দেখতে মাঝারি আকারের সবুজ বৃক্ষ। এর উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। এর ফল লম্বা ডিম্বাকৃতি ত্বক কাটার মত অমসৃণ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ফলের মধ্যে একটি অন্যতম ফল। এর গন্ধ রস ও স্বাদের জন্য এটি দেশ-বিদেশে খুব জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফলটির বাহিরের অংশ অমসৃণ লাগচে গোলাপি বর্ণের যেটা খাওয়া যায় না। তবে এর ভেতরের অংশটি সাদা রংয়ের রসালো শাঁস যা খেতে খুব সুস্বাদু।

লিচু গাছের পরিচর্যা 

লিচু গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা প্রয়োজন। গাছের ফুল আশা থেকে ফল ধরা পর্যন্ত সঠিক পরিচর্যা করলে এর ফলন ভালো হবে। এর সঠিক পরিচর্যা করতে হলে লিচু গাছের খাদ্য যোগান দিতে হবে। তাহলে এর বৃদ্ধি ও ভালো ফলন দিবে গাছের বৃদ্ধি হবে ও ভালো ফলন পাওয়া যাবে। 
গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য সঠিক নিয়মে পরিমাণ মতন সার প্রয়োগ জরুর।বছরে ৩ বারে লিচু গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমবার বর্ষার শুরুতে ফল আহরণের পর, দ্বিতীয়বার বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এবং শেষবার বা তৃতীয়বার গাছে ফুল আসার পরে। 

সার প্রয়োগের পর নিয়মিত শেচ প্রদান করতে হবে। মাটির ধরন অনুযায়ী খরার সময় ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর শেচ দিতে হবে। মুকুল আসার আগে একবার শেচ দিতে হবে, ফল একটু বড় হওয়ার পর আবার একবার শেচ দিতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে শেচ ও স্প্রে করতে হবে। তাহলে ফলন ভালো হবে।

বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য

লিচুর মধ্যে কয়েকটি জাত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বেদনা লিচু একটি জাত। এটা খেতে খুব সুস্বাদু হয়। নিজস্য কিছু বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হলঃ
  • বেদানা লিচু দেখতে গোলাকার গোলাপি রঙের হয়।
  • অন্যান্য লিচু থেকে বেদানা লিচুর বিচি ছোট হয় এবং খোসা পাতলা হয়।
  • বাংলাদেশের দিনাজপুরে বেদনা লিচুর চাষ বেশি হয়।
  • বেদনা লিচুর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে।
  • বেদানা লিচুর চামড়া পাতলা এবং মসৃণ হয়।

লিচু কোন মাসে পাকে

ইতিমধ্যে আমরা বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনেছি।এখন চলুন জেনে নেয় লিচু কোন মাসে পাকে সেই সম্পর্কে।লিচু একটি মৌসুমী ফল। খুব অল্প সময়ে লিচুর মৌসুম থাকে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই একমাস হলো লিচুর মৌসুম।এই সময় বাজার ভরে যায় লিচুতে।

গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া কি নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া নিরাপদ নয়। কারণ লিচু রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। সুতরাং গর্ভকালীন সময় লিচু খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই না খাওয়াই ভালো। তবে খুব বেশি মন চাইলে দিনে তিন চারটি লিচু খাওয়া যেতে পারে।

লিচু খাওয়ার উপকারিতা

গ্রীষ্মকালীন ফল হচ্ছে লিচু। লিচু খুব কম সময়ের জন্য আসে।এর স্বাদ গুণ ও পুষ্টির শেষ নেই। এই ফল বিভিন্ন অসুখ থেকে আপনাকে দূরে রাখবে। কিন্তু বেশি খেলে আবার ক্ষতিও হতে পারে। চলুন দেখে নেই লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো-
  • লিচুতে রয়েছে ফাইবার ও প্রচুর পানি। যা হজমের জন্য ভালো কাজ করে। তাছাড়া গরমে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে পেটকে স্বস্তিতে রাখে।
  • ত্বকের বলি রেখা দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে।
  • গ্রীস্মে নিয়মিত লিচু খেলে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৬ এর ১০ শতাংশ পাওয়া যায়।এই ভিটামিন দেহে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে আবার প্রদাহ জনিত রোগ থেকেও রক্ষা করে।
  • এটা একটা কার্যকরী ব্যাথা নাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে প্রদাহ কমে।
  • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
  • লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাশিয়াম থাকায় এটা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এটা খেলে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি কমে। কারন লিচু ইউরিক এসিডের ঘনত্ব কমায়।
  • ওজন কমানোর জন্য এটা ভালো ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে থাকা ক্যালরী পরিমাণ খুবই কম। তাই ওজন বাড়ার কোনো ভয় নাই।
  • লিচুতে আঁশ রয়েছে। তাই এটা খেলে দীর্ঘ সময়ে পেট ভরা থাকে। নিয়মিত লিচু খেলে হজম শক্তি বাড়ে।
  • লিচুতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে।
  • লিচু হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। লিচুতে থাকে অলিগোনল যা নাইটিক অক্সাইড তৈরিতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইটিক অক্সাইড।
  • এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লিচুতে থাকা অলিগোনল ভাইরাসকে বাড়তে দেয় না। এই গরমের সময় লিচু খেলে সর্দি ও সাধারণ জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

লিচু খাওয়ার অপকারিতা

লিচু খেতে সুস্বাদু হলেও অতিরিক্ত লিচু খাওয়া যাবে না। লিচু খাওয়ার যেমন উপকারিতা আছে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে ঘটতে পারে নানান রকম সমস্যা।
  • অতিরিক্ত লিচু খেলে ওজন বাড়ে।
  • এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফ্যাটি অ্যাসিড নেই। তাই বেশি লিচু খেলে শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে।
  • অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে।
  • খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
  • এটা বেশি খেলে রক্তে গ্লকোজ কমে যায়।
  • যাদের লো প্রেসার তারা একটু বেশি লিচু খেলে বুক ধরফর করতে পারে।
  • যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাদের লিচু বেশি খাওয়া ঠিক না।
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই সব সময় কোন কিছু পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুযায়ী আমাদের খেতে হবে। তাহলে সর্বদা সুস্থ থাকা যাবে আর সুস্থ থাকার জন্য পরিমাণ নির্ধারণটা জরুরী।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বেদানা লিচুর বৈশিষ্ট্য ও লিচু কোন মাসে পাকে সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য সম্পর্কে।আপনি নিশ্চয়ই আজকের আর্টিকেল পড়ে লিচু সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সুন্দর ভাবে বুঝতে পেরেছেন।

এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে ও তথ্য বহুল মনে হয় তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধু ও আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও আপনি যদি তথ্য বিষয়ক আরো জানতে চান তবে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url