আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম-সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন। চুলের যত্নে আমলকির তেল তৈরীর নিয়ম ও তেলের উপকারিতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে। আপনি যদি আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কে না জেনে থাকেন। তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন চুলের যত্নে আমলকির সকল সঠিক তথ্যগুলো।
পোষ্ট সূচিপত্রঃএখানে শুধু আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলা হয় নাই। চুলের যত্নে আমলকির যাবতীয় ব্যবহার সম্পর্কেও বলা হয়েছে। তাই আমলকির সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো জানতে শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা-আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম
প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে এই আমলকির। চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে এ আমলকিতে। চুলের যত্নে এর গুণের শেষ নেই।
চুলের যত্নে আমলকির উপকারিতা
চুলের অনেক রকম সমস্যা হয়ে থাকে। আর প্রতিটি সমস্যার সমাধানের জন্য আলাদা আলাদা উপায় রয়েছে। এই ক্ষেত্রে চুলের যত্নে আমলকির উপকারিতার কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। তবে সঠিক ভাবে আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে হয়তো তেমন জানিনা।
আরো পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা
এখন প্রায় মানুষের চুল পড়া বেড়ে গেছে। এতে আমলকি শুধু খেলেই হবে না এটা তেল বানিয়ে অথবা বেটে মাথায় লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
চুলের ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে
আমলকিতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ মাথার রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এতে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
চুলের ক্ষতি এড়াতে
এতে থাকা ক্যালসিয়াম অতিরিক্ত রোদ্রের তাপ থেকে চুলকে রক্ষা করে।
চুল ঝরার নিয়ন্ত্রণে
আমলকির রস নিয়মিত মাথায় দিলে চুল পড়া অনেকটা কমে যায়। হরমোনের মাত্রা কম বেশি হওয়ার ফলে যখন চুল পড়ে তা প্রতিরোধ করতে আমলকি অতুলনীয়।
পি.এইচ এর ভারসাম্য বজায় রাখতে
মাথার ত্বক শুষ্ক হলে খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। আমলকিতে থাকা কোলাজেন চুলের ফলিকলে পুষ্টি যোগায়। এটা মাথার ত্বকের আদ্রতা ও বজায় রাখে।
কন্ডিশনার হিসেবে
আমলকিতে আছে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ই। তাই এটা ব্যবহার করলে চুলে আলাদাভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।অতিরিক্ত রুক্ষ চুলের জন্য আমলকির তেল খুবই কার্যকরী।
এছাড়া আমলকি খাওয়া ও ভালো। এতে ও অনেক উপকার রয়েছে।
- প্রতিদিন আমলকি খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। দাঁতের গোড়া শক্ত হবে। আমলকি খেলে মুখের রুচি বৃদ্ধি হয়।
- আমলকির রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় মানসিক চাপ ও কমে।
- প্রতিদিন সকালে আমলকির রস মধুর সাথে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম
আমলকি নানান ভাবে চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে পালন করলে চুল হবে ঘন কালো মর্সিন। চলুন জেনে নেই কিভাবে চুলে আমলকির রস দেওয়া যায়।
- আমলকির রসের সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন আধা ঘন্টা পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলকি রস সরাসরি মাথার চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন চুলে। তারপর এক ঘন্টা বা ৫০ মিনিট পরে চুলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- কুসুম গরম নারিকেল তেল এর সাথে আমলকির রস মিশিয়ে এটা চুলের গোড়ায় মেসেজ করুন কয়েক মিনিট তারপর এক ঘন্টা এটা মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ইতিমধ্যে আমরা আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে পারলাম। তাহলে এই নিয়মগুলো আমরা আমাদের চুলের প্রয়োগ করে পেতে পারি স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ও ঝলমলে দীর্ঘ চুল।
নতুন চুল গজাতে আমলকি
পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেকেরই চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়। আর আমরা তখনই খুঁজে ফিরি কি করে চুল পড়া রোধ করব বা চুল ঘন করব। চুল গজানো আর চুল ওঠা রোধ করতে প্রয়োজন চুলের ব্যায়াম। চলুন জেনে নেই চুলের ব্যায়াম সেটা কি মাথার ত্বকে উদ্দীপনা তৈরি করতে হবে মাথা মেসেজের মাধ্যমে।
এতে চুলের ব্যায়াম ও হবে আবার চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ও বাড়বে। চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়লে নতুন চুল গজানো সম্ভব হবে। নতুন চুল গজানোর জন্য আরো কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চললে নতুন চুল গজাবে মাথায়।
- চুলের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার জন্য চুল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। সেই সাথে চুল দিনে কয়েকবার আচরাতে হবে এক্ষেত্রে চুল উল্টো ভাবেও আচরাতে হবে।
- নতুন চুল গজানোর জন্য নিয়মিত পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগানো যেতে পারে। এটা লাগিয়ে ৩০ মিনিট মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
- সপ্তাহে একদিন আমলকি রসের সাথে মেহেদি পাতার রস চুলে ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হবে।এতে চুল পড়া বন্ধ হবে।
- কালোজিরা তেল নতুন চুল গজাতে দারুন কার্যকরী।
- চুল ক্যারোটিন দিয়ে গঠিত। এই ক্যারোটিন অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরনের প্রোটিন। তাই আমাদের শরীরকে পর্যাপ্ত এমাইনো এসিড সরবরাহ করতে হবে নতুন চুল গজানোর জন্য।
- নতুন চুল গজাতে ভিটামিন ই এর সাথে চা এর নির্যাস ভালোভাবে মিশিয়ে এটা মাথার চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করলে চুলের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এতে নতুন চুল গজাবে।
- মাথায় খুশকি থাকলে নতুন চুল গজাতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই মাথার খুশকি দূর করতে হবে। আমলকির এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মাথার খুশকি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমলকির তেল তৈরির নিয়ম
চুল পড়া বন্ধ করতে, চুলের বৃদ্ধিতে ও ঝলমলে চুলের জন্য আমলকি তেলের ভূমিকা অতুলনীয়। চুলের যত্নে আমরা বাড়িতেই আমলকির তেল তৈরি করতে পারি। চলুন জেনে নেই আমলকির তেল তৈরির নিয়ম। এই তেল তৈরি করে এক বছর পর্যন্ত রেখে চুলে ব্যবহার করতে পারি। এই তেল বানাতে যা যা লাগবে তা হল:
উপকরণ
- আমলকি ১৫টি
- কারি পাতা ১/৪ কাপ
- নারিকেল তেল ১/৪ কাপ
- নারিকেল তেল বা তিলের তেল ২/৩ কাপ
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৫ টি।
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে আমলকি ধুয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে। তারপর এর বিচি গুলো আলাদা করে বের করে নিতে হবে। এরপর কারি পাতা ও নারকেল তেল দিয়ে এটা ব্লান্ড করে নিতে হবে। এবার তিলের তেল বা নারিকেল তেল দিয়ে আমলকির মিশ্রণটা ভালো করে মিশিয়ে অল্প আঁচে অনবরত নাড়তে থাকুন।৪০-৫০ মিনিট পর এর রং বদলে গেলে সেটা নামিয়ে ৮ ঘন্টা ঢেকে রাখতে হবে।তারপর এটা ছেঁকে নিন। ব্যাস হয়ে গেল আমলকির তেল। এবার এটা কাঁচের বয়ামে ভরে এক বছর সংরক্ষণ করতে পারবেন।
চুলে কাঁচা আমলকির ব্যবহার
চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহারের শেষ নেই। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু এর চেয়ে বেড়ে গেলে সেটা অস্বাভাবিকতা। তাই আমরা আমলকির রস বা কাঁচা আমলকি পেস্ট করে চুলে ব্যবহার করলে এর ফল পাওয়া যাবে। আমলকি চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুলে খুশকি দূর করে। আমলকি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যা চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে সহায়তা করে।
আমলকির হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে আমলকি খাওয়ার পাশাপাশি আমলকির হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আমলকির গুড়ার সাথে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল আর এলোভেরা জেল মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরি করে সমস্ত মাথার তালুতে এবং চুলে ব্যবহার করতে হবে। এই প্যাক ৩০ মিনিট রেখে চুলে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। ভালো ফল পেতে এটা সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাক চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াবে চুলকে করবে ঘন মজবুত।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয় আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন আমলকির রস চুলে দেওয়ার নিয়ম আমলকির তেলের উপকারিতা ও আমলকির তেল তৈরির নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য।
আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করুন।
এছাড়াও আপনি যদি লাইফস্টাইল বিষয়ক আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করে রাখুন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url