শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

প্রিয় বন্ধুরা শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় এ বিষয়ে যদি জানতে চান তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আপনাদের জানাবো কিভাবে শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করা যায় ও রক্তস্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার সহ এই সম্পর্কিত আরো কিছু বিষয়ে। সেজন্য আপনি যদি রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
পোস্ট সূচিপত্রঃশিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেল থেকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। তাই শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আজকের এই বিষয় নিয়ে আলোচনা।

ভুমিকা-শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

রক্তশূন্যতা এটা কোন রোগ নয় তবে কোন কঠিন রোগের উপসর্গ মাত্র। তাই আমরা রক্তশূন্যতা দেখা দিলে অবহেলা না করে এটাকে গুরুত্ব দিব। বাংলাদেশের প্রায় শিশুদের মাঝে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আইরন রক্তের চিনির মাত্রাকে এনার্জিতে রূপান্তর করে। তাই আয়রনের ঘাটতি হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ,মস্তিষ্কে গঠন সহ সমস্ত অঙ্গের সঠিকভাবে বিকাশে সাহায্য করে।

শিশুর রক্তশূন্যতার লক্ষণ

প্রতিটা শিশুরই তার নিজস্ব আচরণ এবং ইচ্ছাশক্তি বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে থাকে। তবুও কিছু কিছু অস্বাভাবিকতা বা লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে শিশুটির কোন সমস্যা হয়েছে।এর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখেই বোঝা যায় শিশুটির রক্তশূন্যতাই ভুগছে লক্ষণসমূহ হলোঃ
  • রক্তশূন্যতা দেখা দিলে শিশু ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়
  • অল্পতেই হাঁপিয়ে যায়
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
  • জিহ্বা,নখ,চোখ ও ত্বক ফ্যাকাস হয়ে যায়
  • মেজাজ খিটখিটে আর অল্পতেই বিরক্ত বোধ করে
  • ঘুম কম হওয়া
  • খাবারে অরুচি
  • বুদ্ধি কমে যাওয়া
  • স্বাভাবিক ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি না হওয়া
  • ঘনঘন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়া
  • শিশু ছাই, কয়ল্‌ কাদামাটি এগুলো খেয়ে ফেলে।
উপরোক্ত সমস্যা গুলো শিশুর মাঝে দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষা করে রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখে শিশুর রক্তশূন্যতা হয়েছে কিনা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

রক্তস্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার

শিশুর সঠিকভাবে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। আইরন রক্তের হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা ফুসফুস থেকে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেনকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছাতে সাহায্য করে। আর বি এস(Red blood cells) এটা হচ্ছে রক্তের অন্যতম উপাদান। 

আর শরীরে যদি আয়রনের অভাব হয় তাহলে আর বি এস এর কোষগুলো ছোট এবং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে কারণগুলো হলোঃ
  • বাড়ন্ত শিশুদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না থাকা।
  • গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তশূন্যতা।
  • জন্মগতভাবে শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি না হওয়া।
  • যে সকল বাচ্চাদের জন্মের সময় ওজন কম থাকে।
  • যে সকল বাচ্চাদের দুই বছরের আগেই গরুর দুধ খেতে দেওয়া হয়।
  • ৬ মাস বয়সের পরেও শিশুদের পুষ্টিকর বাড়তি খাবার না খাওয়ানো।
  • শিশুকে প্রয়োজনীয় তুলনায় অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করানো।
  • যেকোনো কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
  • পরিবারের কারো থ্যালাসেমিয়া থাকলে শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে।
  • কৃমি সংক্রমণ এর জন্য।
প্রতিকার
বিভিন্নভাবে রক্তস্বল্পতার প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যায়। তাই আমাদের জানতে হবে কোন ধরনের রক্তস্বল্পতাই আপনি ভুগছেন। যেমন আয়রন ও ভিটামিন ডিফিসিয়েনসি অ্যানিমিয়াতে যদি ভুগেন তাহলে শুধুমাত্র ডায়েট পরিবর্তনের মাধ্যমে এটা পূরণ করতে পারেন, 
বিভিন্ন রকম আয়রন ও ভিটামিনযুক্ত খাবার আপনার প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করে। আর আয়রনকে সঠিকভাবে শোষণের জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবারও বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

শিশুর রক্তশূন্যতা আমরা বিভিন্নভাবে দূর করতে পারি ।আর শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো খুবই সহজ লভ্য এই উপায় গুলোর মধ্যে রয়েছে।
ফলিক অ্যাসিড
রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড। এছাড়াও ব্রুকলি, সিমের বিচি,ডুমুর, কলার মোচা, মুগ ডাল, কাঁচকলা,কচু শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে ফলিক এসিডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
প্রাণীজ খাবার
যে সকল প্রাণীজ খাবারে আয়রন রয়েছে সেগুলো হলো:
  • গরুর লাল মাংস,
  • মুরগির মাংস,
  • কলিজা,
  • সমুদ্রিক মাছ ও
  • দই ইত্যাদি।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি আয়রন শোষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দিলেও রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে । তাই পর্যন্ত পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে হবে। যেমন: আমলকি, জলপাই, লেবু,কমলা, আঙ্গুর , বরই, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি। এই ফলগুলো নিয়মিত খেলে শিশুদের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করবে সেই সাথে রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
আপেল
আপেল হচ্ছে আয়রনের ভালো একটা উৎস। প্রতিদিন খোসা সহ একটি আপেল হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
বিট
এটা আয়রনের একটি ভালো উৎস। বিটের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম ও ফলিক এসিড। যা দেহে লাল রক্ত কণিকা বাড়াতে সহায়তা করে।
কলা
কলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম ও বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান। তাই প্রতিদিন একটা কলা খাওয়া খুব উপকারী। কলায় থাকা উপাদানগুলো মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা চটকিয়ে অথবা দুধের সাথে করে শিশুদের খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শুকনো ফলও বাদাম
শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় এর ভিতরে শুকনো ফল ও বাদামের ভুমিকা ও কম নয়। বিভিন্ন ধরনের বাদামে খনিজ লবণ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। শুকনো ফলের মধ্যে রয়েছে কিসমিস, খেজুর, আলু বোখারা। 

এই শুকনা ফল ও বাদাম শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করে এবং শরীরকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। অনেক সময় শিশুরা কিসমিস, খেজুর ও বাদাম খেতে চায় না। তাই তাদেরকে এই খাবারগুলো দুধের সাথে ব্লান্ড করে খাওয়ানো যেতে পারে।
বেদানা
শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় এর ভিত্এরে রয়েছে বেদানা।বেদানাতে আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিন, শর্করা ও আঁশ রয়েছে। এটা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আর দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখতে ও ভূমিকা রাখে। 

রক্তস্বল্পতায় যে সকল শিশুরা ভুগছে তাদেরকে প্রতিদিন একটা বেদানা খাওয়ালে রক্তস্বল্পতার ঘাটতি কম হবে। বেদানার রসের সাথে কমলা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে আয়রন শোষণ ভালোভাবে হয়। কিন্তু বেদনার বীজ খাওয়ানো ঠিক না। কেননা বেদানার বীজ শিশুরা খেলে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কম থাকলে কি হয়

আমাদের দেশে অনেক শিশু রক্তশূন্যতাই ভোগে বিভিন্ন রকম কারণে শিশুদের রক্তশূন্যতা হতে পারে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে জন্মগত কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে। চলুন আমরা জেনে নেই রক্তশূন্যতা কী ? রক্তশূন্যতা হলো মেডিকেল ভাষায় অ্যানিমিয়া (Anaemia) ।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন কম হয়ে যায় বা থাকে তখন রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।তাহলে উপরে আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কম থাকলে কি হয়।

বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন কত থাকে

আমাদের দেশের শিশুরা আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগে। শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বয়স ও লিঙ্গ ভেদে স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে থাকলে আমরা বলি যে শিশুটির রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এক বছর থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১১ গ্রাম থাকা ভালো। এর নিচে থাকলে বুঝতে হবে শিশুটি রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। তবে নিউবর্ন বেবির ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৭- ১৮ স্বাভাবিক। চলুন এবার দেখে নেই বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা।
নবজাতকের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রাঃ১৭-১৮।
শিশু এক বছর বয়স পর্যন্ত হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রাঃ১০।
১২-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রাঃ১২।

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় এটা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে হিমোগ্লোবিন কি,এর কাজ কি ও এর সঠিক মাত্রা কত এইসব বিষয় সম্পর্কে ।
হিমোগ্লোবিন কি
হিমোগ্লোবিন হল রক্তে অবস্থিত প্রোটিন।এটি রক্তের প্রধান উপাদান। এটি অবস্থান করে রক্তের লোহিত কণিকায়। আর হিমোগ্লোবিনের জন্যই রক্ত লাল হয়। রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিজেনের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
হিমোগ্লোবিনের কাজ
আমাদের শরীরের রক্তের কিছু বিশেষ বিশেষ কাজ হিমোগ্লোবিন সম্পন্ন করে থাকে। এর প্রধান কাজ ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করা আর সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়া এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করার কাজেও ভূমিকা রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে তা ফুসফুসে প্রেরণ করে এবং সেই কার্বন ডাই অক্সাইড শ্বাস-প্রশ্বাস এর মধ্যে মাধ্যমে তা নির্গত হয়।
হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা
হিমোগ্লোবিন কি ও এর কাজ কি এটা সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা সম্পর্কে হিমোগ্লোবিনের সঠিক ও স্বাভাবিক মাত্রা আমাদের জানতে হবে এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়। নারীদের তুলনায় পুরুষের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একটু বেশি থাকে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা: ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম।
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা:১২-১৫.৫ গ্রাম।এই স্বাভাবিক মাত্রা থেকে পরিমাণ একটু কম হলেই রক্তশূন্যতা দেখা দিবে।

শরীরে রক্ত কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়

শরীরের রক্ত কমে গেলে মেডিকেল ভাষায় তাকে বলে অ্যানিমিয়া । আর শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। মানব দেহে বিভিন্ন ভিটামিন প্রয়োজন। আর এই ভিটামিনের অভাবে শরীরে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয় ।আইরনের অভাব দেখা দিলে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। 

যার ফলে রক্তশূন্যতা হয় ।অ্যানিমিয়া কোন অসুখ নয় এটা একটা অসুখের লক্ষণ মাত্র ।তাই শরীরে অ্যানিমিয়া সারাতে হলে তার কারণটা খুঁজে বের করে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে ।রক্ত কমে গেলে নানা রকম সমস্যা হয় যেমনঃ
  • ঘুম কম হওয়া
  • খাবারের অরুচি
  • ক্লান্তিবোধ
  • দুর্বলতা
  • শ্বাসকষ্ট
  • মাথা ব্যথা ইত্যাদি।

শরীরের রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ

শরীরের রক্ত কম হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এটি সবচেয়ে বড় অপুষ্টিজনিত সমস্যা। পরিবারের কেউ রক্তশূন্যতায় ভুগলে অন্যান্যদেরও এটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। শরীরের রক্ত কম হওয়ার লক্ষণ রয়েছে কিছু চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের অক্সিজেন পরিবহন করে। তাই হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় । তখন রোগী কোন স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না সব কাজে হাপিয়ে উঠে সব সময় ক্লান্তি ভাব থাকে।
  • রক্তস্বল্পতার জন্য তার ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কেউ সেটা বুঝতে পারে না।তারা ধারণা করে যে হয়তো ত্বক উজ্জ্বল হচ্ছে। রক্তস্বল্পতার জন্য চোখের ভেতরের মাংস পেশীর রঙ ও সাদা হয়ে যায়।
  • রক্তস্বল্পতার জন্য চুল পড়া সমস্যা বেড়ে যায়।
  • রক্তস্বল্পতার জন্য অল্পতেই ক্লান্ত ও বিষণ্ণতায় ভোগে। যার ফলে মাথা ব্যাথার মত সমস্যা দেখা দেয়।
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
তাই উপরোক্ত সমস্যাগুলো বা লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময় মত রক্তস্বল্পতা চিকিৎসা না করালে ঘটতে পারে নানা রকম বিপদ।

শরীরের রক্ত বৃদ্ধির উপায়

রক্ত হচ্ছে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রক্তে আছে লাল রক্ত কণিকা, সাদা রক্ত কণিকা এবং প্লাটিলেট। এই তিনটি উপাদানের কোন একটি কম হলে আমাদের স্বাভাবিক সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব নয়।হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আর হিমোগ্লোবিন কম হলে দেহে অক্সিজেন এর মাত্রা ও কমে যায়। 

ফলে অক্সিজেনের অভাবে দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে রক্তশূন্যতার মতো রোগ হয়।রক্তশূন্যতা থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো। কয়েকটি খাবারের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব।
প্রানিজ প্রোটিন
এটা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়ায়। যেমন সকল ধরনের লাল মাংস, কলিজা এগুলো আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস। মুরগির মাংস তেও আয়রন রয়েছে এটাও দেহকে আইরন সরবরাহ করে।
ফল
সব ধরনের রসালো সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন আম, লেবু ,কমলা, ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। আইরন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি খুব বেশি জরুরী। কারণ এর ফলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনের গতি বাড়ে। এছাড়া স্ট্রবেরি,তরমুজ, পেয়ারা ,বেদানা, আপেলে ও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
কলায় বা শুটি জাতীয় খাদ্য
সয়াবিন ,ছোলা এবং বিন জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য
শালগম, বার্লি এবং ওটস রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। বিশেষ করে লাল চাল সব বয়সীদের জন্য আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাবার।
সবজি
প্রতিদিন আমরা যদি তাজা সবজি খাই তাহলে আয়রনসহ নানারকম ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টির ঘাটতি মেটানো সম্ভব। যেমন : আলু, ব্রকলি, টমেটো ,কুমড়া ইত্যাদি।
ডিম
ডিম এ রয়েছে উচ্চমাত্রায় আইরন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। প্রতিদিন একটা ডিম সিদ্ধ খেলে এ থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি মিলবে।
সামুদ্রিক খাদ্য
সামুদ্রিক খাদ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান ।
শুকনো ফল
কিসমিস এবং খেজুরি রয়েছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এবং আঁশ । তাই এগুলো নিয়মিত খেলে দ্রুতগতিতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে।
বাদাম
যেকোনো ধরনের বাদাম রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুত গতিতে।
ডার্ক চকলেট
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এটা শিশুদের প্রিয় খাবার ।তাই শিশুদের নিয়মিত এই ডার্ক চকলেট দিন তাহলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে দ্রুত।

উপরের আলোচিত সবগুলো খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তাই দেহে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে এইসব খাদ্যগুলো নিয়মিত খেয়ে দেহে আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত গতিতে বাড়িয়ে নিন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি শিশুর রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং রক্তস্বল্পতার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়ের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। 

এছাড়াও আপনি যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url