ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানার জন্য অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি স্টেপ বাই স্টেপ এই বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত আরো অনেক বিষয় জানতে পারবেন। তার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের সদুত্তর পেয়ে যাবেন।
ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায়
পোষ্ট সূচিপত্রঃএই আর্টিকেলের ভেতর শুধু ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায় সেই বিষয়েই বলা হয় নাই। এছাড়াও ইহা সম্পর্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক সমস্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো।

ভূমিকা-ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায়

ইসুবগুলের মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা খেলে আমাদের অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। এটি পানিতে দ্রবণীয়। তাই সহজে পানিতে মিশে যায় আর পানির ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এটি খেলে হজম ভালো হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন কমাতে ও সাহায্য করে। এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। পানিতে মিশানোর পরে এর আকার ১০ গুন বাড়ে। 

এটা খেলে হজম ভালো হয় বলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না তাই নিয়মিত মলত্যাগ করা যায়। সেজন্য শরীরে কোন ফ্যাট জমা হতে পারে না। ইসুবগুলের ভুষি ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে তাই এটা খেলে ওজন কমে।

খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার নানা রকম উপকারিতা রয়েছে। খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। তবুও না জেনে অনেকে এটা খালি পেটে খেয়ে থাকি। চলুন দেখে নেই খালি পেটে ইসগুলির ভুসি খেলে আমাদের শরীরের কি কি সমস্যা দূর হয়।
  • এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তাই পাইলসের মতো রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় বা পাইলস রোগীদেরও ইসুবগুলের ভুষির শরবত নিয়মিত খাওয়ার জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন। এটি পায়খানা নরম রাখে। এটি ঠান্ডা অথবা হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে উপকৃত হবেন।
  • টাইপ টু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়রিয়া উপশমের দিনে দুইবার ইসবগুলের ভূষি খেতে পারেন। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা সব সময় ইসুবগুলের ভুষির শরবত খান।
  • হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে পাকস্থলীকে পরিষ্কার রাখতে ও এটা ভূমিকা অতুলনীয়।
  • এটা আমাশয় রোগীর জন্য ও উপকারী।

ইসবগুলের ভুসি খেলে কি বীর্য গাঢ় হয়

ইসুবগুলের ভুষি তে রয়েছে ফাইবার এবং এন্টি অক্সিডেন্ট। বীর্য উৎপাদনে এটার ভূমিকা রয়েছে। এখানে শুক্রাণু উৎপাদনকারী কোষগুলোর পুষ্টি এবং শুক্রাণুকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হলো ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ। নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেলে বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে যা বীর্য গাঢ় হওয়ার দিকে ও নিয়ে যেতে পারে। 
এছাড়া বীর্য গাঢ় করার জন্য আমাদের টেনশন ফ্রি থাকতে হবে, প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে । এছাড়াও নিয়মিত কলা, ডিম, দুধ খেতে পারেন। কাঁচা রসুন ও বীর্য গাঢ় করতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম

কোষ্ঠকাঠিন্য একটা সাধারন সমস্যা। কম বেশি প্রায় সব মানুষেরই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এটা সাধারণ সমস্যা হলেও কোন কোন সময় বড় আকার ধারণ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া নানান রকম সমস্যা দেখা দেয় ।তাই আমরা খুঁজতে থাকি কিভাবে এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 

তবে ইসুবগুলের ভুষির নাম আপনারা সবাই শুনে থাকবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম হলো এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে ইসুবগুলের ভুসি পায়খানায় পানির পরিমাণ বাড়ায়ে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে।

ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায়

এটি একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।এটি হজমের জন্য খুব ভালো কাজ করে। ইসুবগুলের ভুসি কত দিন খাওয়া যায় এটা নির্ভর করে একজন মানুষের নির্দিষ্ট পরিমাণ চাহিদার উপরে। কোন কিছু বেশি পরিমাণ বা বেশি দিন ধরে নিরাপদ নয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এর সময় বাড়ানো কমানো যেতে পারে। 

তবে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা এটা নিয়মিত খেতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। এটা যেহেতু উদ্ভিদভিত্তিক ফাইবার তাই বেশি দিন ব্যবহারে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এটা ব্যবহার বন্ধ করে দিলে পার্শ্বপ্রতিকিয়া গুলো ও চলে যায়।

ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা

ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো:
  • রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে এটা সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য পুষে রাখলে কোলন ক্যান্সারও হতে পারে।
  • ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসুবগুলের ভুষির সাথে দই মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই।
  • ওজন কমাতে ও এর ভূমিকা কম নয়। এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতিতে করার ফলে ক্ষুধা কম লাগে। তাই ওজনও দ্রুত কমতে থাকে।
  • জিলাটিন নামক উপাদান যা দেহের গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙ্গার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় ।যার ফলে রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে। সেজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলীতে একটি স্তর তৈরি করে যা এসিডিটি কমিয়ে হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।
  • প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই জানি এটা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কিন্তু কোনটা ঠিক নিয়ম তা জানি না তাই নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি দীর্ঘদিন খাওয়ার পরে ও কোন ফল পাওয়া যায় না। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক খাওয়া সঠিক নিয়ম গুলো।
  • এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ইসুবগুলের ভুষি দিয়ে নেড়ে ভালোভাবে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে। যাতে বাহির থেকে পানি শোষণ করে ফুলে না যায়। এতে চিনি মেশানোর কোন দরকার নেই।
  • প্রোবায়োটিক হিসাবে ও এটির ব্যবহার হচ্ছে। তিন চামচ টক দই আর দুই চামচ ইসুবগুলের ভুষি একসাথে মিশিয়ে খাবারের পরে খাবেন। তারপর এক গ্লাস পানি খাবেন। ডায়রিয়ার প্রতিকারে এটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে।
  • এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমিয়ে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। যার ফলে এনাল ফিসার, পাইলস ও হেমোরয়েড রোগের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • দুই চামচ ইসুবগুলের ভুষি এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে নাস্তার পরে খেলে ওজন কমে।

ওজন কমাতে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

এটাতে থাকা ফাইবার দ্রবণীয় ও অদ্রবনীয় এই ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরে রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ভালো রাখে। ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। আর ওজন কমানোর জন্য কম ক্যালোরি গ্রহণ করা দরকার। 

ইসুবগুলের ভুষি খেলে পেট ভরা ভাব থাকে অনেকক্ষণ। ইসুবগুলের ভুষি খেলে হজম ঠিকঠাক থাকে আর হজম ঠিক হলে নিয়মিত মলত্যাগ করা হয়। তাই কোন ফ্যাট শরীরে জমা হতে পারে না আর ইসুবগুলের ভুষি ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। তার জন্য ওজন কমতে থাকে।

ইসবগুলের ভুসির ক্ষতিকর দিক

ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। অতিরিক্ত ইসুবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা, অরুচি, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই এটা খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। এর ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে
  • কোন ওষুধ সেবনের সাথে সাথে এটা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটা বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে তাই ওষুধ সেবনে দুই ঘন্টা আগে বা পরে ইসুবগুলের ভুসি সেবন করতে হবে।
  • এটা দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে পানি শোষণ করে ফুলে যায়। সেজন্য এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং খাওয়ার সময় এটা গলায় আটকায় যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনার নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করে জানতেও বুঝতে পেরেছেন ইসুবগুলের ভুষি কতদিন খাওয়া যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে। আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। 

আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। এছাড়াও আপনি যদি ভেষজ বিষয়ক আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url