গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে।তাই সকল তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
পোষ্ট সূচিপত্রঃআজকের আর্টিকেলে শুধু গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয় নাই, এখানে থানকুনি পাতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি থানকুনি পাতার সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনি জেনে নিতে পারেন থানকুনি পাতা সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্যগুলো।

ভূমিকা-থানকুনি পাতা কি

থানকুনি পাতা হচ্ছে একটি বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এটি ভারত, বাংলাদে্‌ ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে ও এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কারী ভিটামিন সি। থানকুনি পাতায় রয়েছে নানা রকমের ওষুধি গুণ। এটার রস ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী।গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।

থানকুনি পাতা চেনার উপায়

অনেকে আমরা থানকুনি পাতা চিনতে পারিনা। চলুন জেনে নেয়া যাক থানকুনি পাতার চেনার উপায় সমূহ।
  • থানকুনি পাতা ভিজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। বাড়ির আনাচে-কানাচে ভেজা জায়গায় এগুলো দেখা যায়। তাছাড়া পুকুর পাড়ে এগুলো দেখা যায়।
  • থানকুনি পাতা দেখতে সবুজ রঙের। এটা খুবই মসৃণ এর গায়ে কোন কাটা নেই।
  • গোল গোল ছোট ছোট পাতা লতানো গাছের মতো ছড়িয়ে থাকে।
  • এটা খেতে সামান্য তিতা তিতা ভাব লাগে।

থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য

থানকুনি পাতার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথাঃ
  • মুখে ব্রণ দূর করে
  • মুখের ঘা ও অন্যান্য ক্ষত দূর করে
  • পেটের অসুখে থানকুনি ভালো কাজ করে
  • আমাশয়ের জন্য এটা খুবই কার্যকরী
  • স্বাভাবিকভাবে সর্দি ও কাশি কমাতে সাহায্য করে
  • গলা ব্যথা কমায়
  • এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি তাই এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হবে

থানকুনি একটা ভেষজ গাছ। এটা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় তবে বর্ষাকালে একটু বেশি পাওয়া যায়। নানা রকম গুণে ভরা এই থানকুনি পাতাতে।এটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হবে এর নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় চামচ থানকুনি পাতের রস মিশিয়ে খেতে পারেন। 
আবার খালি পেটে ও থানকুনি পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়াও কাঁচা থানকুনি পাতা ধুয়ে চিবিয়ে খেলেও উপকার কম নয়। থানকুনি পাতা বেটে পেস্ট করে বড়া বানিয়ে ও খাওয়া যায়।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা

প্রতিটা মানুষই তার যৌবনটাকে ধরে রাখতে চাই। আর সেজন্য সবাই কিছু না কিছু পদ্ধতি খুঁজতে থাকে। তবে সেটা যদি হয় হাতের নাগালে ক্ষতি কি তাহলে। চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে যৌবন ধরে রাখা যায় সেই বিষয়ে। আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন ভেষজ থানকুনি পাতার নাম। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন প্রিয় পাঠক। থানকুনি পাতাতে রয়েছে অনেক আশ্চর্য রকমের গুণ। 

এই থানকুনি পাতার রস যৌবন ধরে রাখতে খুব ভালো ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিত এই পাতার রস খেলে চেহারায় লাবণ্য চলে আসবে। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে ৫-৬ চামচ থানকুনি পাতার রস খেলে চেহারার উজ্জ্বলতা বাড়ে।যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা কতটুকু আপনি নিশ্চয় বুঝতে পেরছেন।

পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা

পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী। পেটের কামড়, আমাশা এমনকি পেটের নানা রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খেলে পেটের কোন সমস্যা দেখা দেবে না।

থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর তার মধ্যে হল থানকুনি পাতা একটি। থানকুনি পাতার ইংরেজি নাম হল ইন্ডিয়ান পেনিওয়াট। থানকুনি পাতা আমরা খাবার এবং ওষুধ এই দুই ভাবেই ব্যবহার করতে পারি। শেকর থেকে পাতা সমস্ত অংশই খাওয়া যায়। নানান উপকারিতা রয়েছে এই থানকুনি পাতাতে। এবার চলুন দেখে নেই এর উপকারিতা গুলোঃ
  • এটি হজমের সমস্যা দূর করে। এক চিমটি লবণ দিয়ে এই পাতাটা সিদ্ধ করে এর পানি নিয়মিত পান করুন। এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • থানকুনি পাতাতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়া। এই এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি আমাদের মূত্রনালী ও পেটের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতা সেদ্ধ করে সেঁকে নিন এতে মধু যোগ করে নিয়মিত খান।
  • প্রতিদিন সকালে এটি পাকা কলার সঙ্গে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে আপনার পেটের স্বাস্থ্য এবং লিভার দুটোই ভালো থাকবে।
  • থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে খুসখুসে কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ সারাতে সাহায্য করবে। এছাড়া তুলসী ও গোলমরিচ দিয়ে থানকুনি পাতার রস খেলে তা ঠান্ডা এবং জ্বর ও নিরাময় করে।
  • নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • থানকুনি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটা আরো বাড়াতে এর সঙ্গে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেবন করুন। এটা শিশুকে খাওয়ালে শিশুর ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
  • অনেকের ঘুমের সমস্যা রয়েছে। ঘুমের সমস্যা হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা অসুস্থ হয়ে যায়। প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস খেলে ঘুম ভালো হয়। আর থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত কাজ করে।
  • যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
  • থানকুনি পাতা যে কোন ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে এন্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য যা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ক্ষত দ্রুত সারার জন্য এবং ত্বকের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য থানকুনি পাতার গুড়া পেস্ট তৈরি করে ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করুন।
  • চুলের যত্নে ও থানকুনি পাতার জুড়ি কম নয়। থানকুনির গুঁড়া দিয়ে প্যাক তৈরি করে মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে।চুলের ঘনত্ববাড়ায় থানকুনি পাতা।
  • গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।গর্ভকালিন শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করে।

থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয় বা ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা

ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা খুবই উপকারী।থানকুনি পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আইরন ও অন্যান্য উপকারী মিনারেল। এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি প্রচুর পরিমাণে। ভিটামিন বি ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখে আর ভিটামিন সি ত্বকের ভেতরে থাকা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। থানকুনি পাতা ত্বকের ব্রণ এর তীব্রতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত দ্রুত সারাতে সহায়তা করে। থানকুনি পাতা খেলে যেমন ত্বকের উপকার হয় তেমনি এটা ত্বকে টপিক্যালি ব্যবহার ও করা যায়। এটা দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগানো যায়। এটা ত্বকের ময়লা কাটিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।

চুলের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে থানকুনি পাতার ব্যবহার রয়েছে। চুলের অকাল পক্কতা ও চুলের রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে এটা। এটি ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। তাই মাথায় নতুন চুল গজায়। চুল ঝরে পড়া ও কমায়। মেহেদী পাতার সঙ্গে থানকুনি পাতা মিশিয়ে পেস্ট করে মাথায় দিলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আমলার সঙ্গে ও থানকুনি পাতার পেস্ট মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। যাদের চুল ওঠা বন্ধ হচ্ছে না এবং চুল পাতলা তারা এটা সপ্তাহে ২ বার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। নারী-পুরুষ উভয়েই এটা ব্যবহার করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায়ী থানকুনি পাতা খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে। যথাঃ
  • থানকুনি পাতাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই গর্ভাবস্থায় সংক্রমনের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  • থানকুনি পাতায় এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও রয়েছে যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • এটি ব্যথা উপশম করে কারণ এতে রয়েছে এন্ট্রি ইনফ্লামিটি বৈশিষ্ট্য।মা গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা কোমরের ব্যথা শরীরের যাবতীয় ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষের দিকে থানকুনি পাতা না খাওয়ায় ভাল। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারেন।

থানকুনি পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে।থানকুনি পাতার বেলাই ও এর ব্যতিক্রম নয়।থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটাই আছে।থানকুনি পাতা খেলে পেট ব্যথা কমে কিন্তু বেশি পরিমানে খেলে পেট ব্যথা বাড়ে এবং নানান রকম সমস্যার দেখা দিতে পারে।তাছাড়া যাদের লিভার এর সমস্যা আছে তারা থানকুনি পাতা না খাওয়ায় ভালো।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনি নিশ্চয়ই আজকের আর্টিকেল পড়ে থানকুনি পাতার সম্পর্কে সঠিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 

এই আর্টিকেলের সমস্ত তথ্য যদি আপনার কাছে তথ্যবহুল ও উপকারি মনে হয়, তাহলে পোস্টটি শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। এমন ভেষজ সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url