আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা

আপনি কি আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি ঠিক জায়গাতে এসেছেন। কারণ আমার এই আর্টিকেল এর ভেতর আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম ও এর সম্পর্কে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যার অনেক কিছু আপনাদের অজানা আছে। তাই এটা সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন, তাহলে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে শুধু আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা সম্পর্কেই বলা হয়নি। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এটা খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিতভাবে।

ভূমিকা-আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার হাজার বছর ধরে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি সৌন্দর্য উপাদান , একটি ক্ষত বাম ,খাদ্যের মসলা , খাদ্য সংরক্ষণকারী এবং ওজন কমানোর সহায়ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এটি আমেরিকায় জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল আমেরিকান গৃহযুদ্ধ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। আপেল সিডার ভিনেগার হচ্ছে আপেলের রস। 
আর এই রসটাকে দুবার গাজানো হয়। প্রথমে আপেলের রস আপেল সিডারে গাজন করা হয়। তারপর আপেল সিডারকে আপেল সিডার ভিনেগার রূপে গাজন করা হয়। এভাবে দুইবার গাজানোর ফলে আপেলের রসের প্রাকৃতিক শর্করাকে অ্যালকোহলে এবং তারপরে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে ভেঙ্গে দেয়। এতে লাইভ ইস্ট ব্যাকটেরিয়া থাকে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এটাতে রয়েছে চমৎকার প্রোবায়োটিক গুণাবলী।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার কি। আর এতে কি কি উপকারি উপাদান রয়েছে। এটা সবচেয়ে বেশি উপকারী তাই এটা জনপ্রিয় ও বটে। এটা প্রস্তুতির সময় যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয় সেটাকে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়া বলে। 
এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়াটির মেয়াদকাল আরো বাড়িয়ে নেওয়া হয়। তখন এতে কয়েক ধরনের উপকারী এনজাইম অ্যাসিটিক এসিড এবং ইস্ট এই ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে যায়। এই সকল উপকারী উপাদান সমূহকে একত্রে 'মাদার' বলা হয়। 

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার হল সার্বজনীন ইনফ্লামেটরি, এন্ট্রি ভাইরাল, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টিসেপটিক। এটি ত্বক ও চুলের জন্য খুব ভালো। তাই তো চুলের যত্নে এটির ভূমিকা অপরিসীম।
  • ওজন কমানোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কার্বোহাইড্রেটের হজমে সাহায্য করে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমায়।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
  • এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে চিকিৎসা গতভাবে। এটি ইনসুলিন ও রক্তে শর্করার ওঠানামা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকতে সহায়তা করে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এটা রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবনে কার্ডিয়াক এবং ভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উন্নতিতে সহায়তা করে।
  • এটি ছত্রাক সংক্রমণ ক্ষত পরিষ্কার এবং জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এটা মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে, দাঁত সাদা করতে, রোদে পোড়া দাগ দূর করতে এবং ব্রণ এর জন্য একটি ঘরোয়া উপাদান হিসেবে জনপ্রিয় ভূমিকা পালন করে।
  • এটার ভিতরে থাকা প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
মুখ ও ত্বকের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার
মুখের ত্বকে পিগমেন্টেশন দূর করার জন্য এটা খুব কার্যকরী মাধ্যম। এটা পানির সাথে মিশিয়ে তুলার বল দিয়ে হালকা করে ত্বকে ব্যবহার করুন। আবার টোনার হিসাবে ও ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এটা ব্রণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার চুলের খুশকি দূর করে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়

আপেল সিডার ভিনেগার কত দিন খাওয়া যায় এই বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, এটা খোলার পরে বেশি দিন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ আপেল সিডার ভিনেগার সংরক্ষণ করার পদ্ধতিটা আমাদের সঠিকভাবে জানা জরুরী। আপেল সিডার ভিনেগার বোতলের মুখ বারবার খোলার জন্য এতে বারবার অক্সিজেন প্রবেশ করে। যা ভিনেগারের পানি অস্পষ্ট করে দেয় এবং নিচে তলানি জমায়। 

অক্সিজেন ভিতরে ঢুকে সিট্রিক এসিড ও সালফার ডাই অক্সাইড এর নিঃসরণ ঘটায়। আর এ দুটি উপাদানই ভিনেগার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কতদিন খাওয়া যায়, আর এর সংরক্ষণ কিভাবে করা যায়।

কখন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে বেশি উপকার

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী আর কখন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেলে বেশি উপকার সেটা আমাদের জানা জরুরী আপেল সিডার ভিনেগার টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমায় আপেল সিডার ভিনেগার। রাতে ঘুমানোর প্রায় আধাঘন্টা আগে ২ টেবিল চামচ কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া ভালো।

আপেল সিডার ভিনেগার কেন খাব

আপনি জানেন কি আপেল সিডার ভিনেগার আমরা কেন খাব। যদি না জেনে থাকেন, এটা কেন খাবেন তাহলে অবশ্যই এই সম্পর্কে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের এসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় আর সেজন্য খাবার দ্রুত ভালোভাবে হজম হয়। তাই আমাদের হজমের সমস্যা থাকলে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া ভালো।

আপেল সিডার ভিনেগার খাবার সময়

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময় কখন এটা খেতে হলে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস নেই রক্তে শর্করা বেশি তারা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারবে। তাহলে সকালে রক্তে শর্করা বাড়ার গতি কমাবে।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সাহায্য করে। তাই অনেকেই ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ নিয়ম না জেনে এটা খাচ্ছেন। কিন্তু একটা জিনিসের যেমন উপকার আছে তেমনি ক্ষতির দিকও রয়েছে। 

তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্যই এটার নিয়ম ভালোভাবে জেনে পরিমাণ মতো খাওয়া জরুরী। আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে এসিটিক অ্যাসিড। অনেকেই ওজন দ্রুত কমানোর জন্য ভেবে থাকেন এর সাথে লেবুর রস যোগ করার কথা। কিন্তু লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড এদিকে ভিনিগারে ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। 

তাই এমন ভাবে একসাথে দুটো এসিড যোগ করে খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর। ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খান। তাহলে এক মাসের মধ্যে ভালো একটা ফল পাবেন।

আপেল সিডার ভিনেগার কি ফ্রিজে রাখতে হয়

ঠান্ডা এবং অন্ধকার স্থানে রাখতে হবে কিন্তু এটা ফ্রিজে রাখা কোন দরকার নেই। এটা সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল।এটা এয়ার টাইট একটা কাঁচের জারে রেখে ঠান্ডা ও অন্ধকার স্থানে রাখা, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারবেনা।

আপেল সিডার ভিনেগারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আপেল সিডার ভিনেগার একটি নিরাপদ পদার্থ কিন্তু এর মাত্রা যদি ঠিক না থাকে তবে ক্ষতি হতে পারে।আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা যেমন শেষ নেই তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক ভিনেগারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
  • এই ভিনেগার ত্বক ও মাথাতে যদি পানির সাথে না মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি জ্বালা ভাব সৃষ্টি করে।
  • পানিতে নাম এসে এটি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করা সহ গলাপোড়া হতে পারে। তাই এটি খাওয়ার পরে সর্বদা পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। এটি জিহ্বায় ক্ষত সৃষ্টি করে।
  • এটি ব্যবহারে অন্ত্রের অস্বস্তি ভাব হতে পারে।
  • এটি দীর্ঘদিনের ব্যবহারে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই যাদের পটাশিয়ামের মাত্রা কম তাদের জন্য এটা সেবন করা বিপদজনক।
  • এটার গন্ধ শুকা যাবেনা। শ্বাসতন্ত্রের কোন সমস্যা থাকলে এর গন্ধ থেকে এড়িয়ে চলুন। এর গন্ধে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, এমনকি ফুসফুস ডেমেজ ও হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা এটি ডায়াবেটিস ওষুধের পাশাপাশি গ্রহণ করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (ব্লাড সুগার কমে যাওয়া) হতে পারে।
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি খাওয়া যাবে না। এতে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পরে কমপক্ষে আধা ঘন্টা শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। এই আধাঘন্টা খাওয়া ঘুম কোনটাই করা যাবে না।
  • অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়, চুলকানি, পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ত্বক লাল বা রেশ মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব এই সমস্যা গুলো হতে পারে।
  • এটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে ক্ষতিকর। এর ফলে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ এটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে হাড়ের খনিজ গুলো বের হয়ে যায়। আর এই উচ্চ এসিডের মাত্রার জন্য নতুন হাড়ের গঠনও হ্রাস পেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই আমাদের আজকের আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর উপকারিতা ও আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে। 

আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে কেমন লাগলো তা আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার কাছে তথ্যবহুল এবং উপকারী বলে মনে হলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়ের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। 

এছাড়াও আপনি যদি ভেষজ বিষয়ক নতুন নতুন আরো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url