বারোমাসি আমের জাত সমূহ - সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাছাড়া কোন আম কখন আসে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করছি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে শুধু বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে বলা হয় নাই। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ও আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা-বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে জানুন
আম মৌসুমী ফল।কিন্তু এখন বারোমাস আম পাওয়া যাই।বিভিন্ন বারোমাসি আমের জাত রয়েছে।অনেকে হয়তো বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে জানে না।আমার এই আরটিকেলের মাঝে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।গ্রীষ্মকালের ফলের মধ্যে আম হচ্ছে একটি রসালো ফল। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আম পাওয়া যায়। আম এর জন্য বিখ্যাত জেলা হচ্ছে নওগাঁ। তাছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোরে প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কত প্রজাতির আম পাওয়া যায়
আপনি কি জানেন, বাংলাদেশে কত প্রজাতির আম পাওয়া যায়।না জেনে থাকলে এক্ষুনি জেনে নিন আমার এই আরটিকেলের ভিতর থেকে।বাংলাদেশের তথ্য মতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ২১ জাতের আম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে অর্ধেক আমই উন্নত প্রজাতির। মে থেকে সেপ্টেম্বর মোট পাঁচ মাস আমের মৌসুম। বেশি আম জুন থেকে জুলাই মাসে পাওয়া যায়। এছাড়া ও আমের বিভিন্ন জাত রয়েছে। যেমন:
- ফজলি
- ল্যাংড়া,
- আম্রপালি,
- গোপাল ভোগ,
- মিশ্রি দানা,
- কাঁচা মিঠা,
- বারোমাসি,
- কারাবাউ,
- গোপাল খাঁস,
- ত্রিফলা,
- হাড়িভাঙ্গা,
- গুটলি,
- লখনা,
- হিমসাগর,
- রানী পছন্দ,
- সিঁদুর টোকা,
- মল্লিকা,
- চোষা,
- বউ সোহাগী,
- জগন্নাথ ভোগ ,
- খিরসাপাত ইত্যাদি।
'এক আম তার হাজার নাম ' ।তবে এর মধ্যে অনেকগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়। আম কাঁচা পাকা খাওয়া ছাড়াও কাঁচা আমের শরবত, আচার, আমসত্ত্ব ,জ্যাম, জেলি, অম্বল ইত্যাদি অনেক রকম করে বাঙালি খেয়ে থাকে।
কোন আম কখন আসে
আম মৌসুমে সবার আগে দেখা যায় গোপাল ভোগ যাতের আম। গোপালভোগ আম মাঝারি আকারের হয়। এতে আশ নেই ও মিষ্টি ।তারপর উঠে হিমসাগর বা খিরসা পাত আম। এই আম খুব মিষ্টি সুঘ্রাণ যুক্ত ও সুস্বাদু হয়। এটাই সেরা আম। এই আমের আসল জায়গা হল চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
কোন আম কখন আসে এটা আমরা সকলে মোটামুটি জানি।তবুও কিছু জানার বাকি থাকে।চলুন তাহলে জেনে নেই বারোমাসি আম ছাড়া কোন আম কখন আসে সেই সম্পর্কে। এরপর ল্যাংড়া। ল্যাংড়া আম অনেকটা আয়তাকার গোল। এই আম হালকা সবুজ হয়। পাকলেও খোসা সবুজ থাকে। খোসা তুলনামূলকভাবে পাতলা। ভালোভাবে না পাকলে খেতে কেমন কস কস লাগে। পাকলে এর সুঘ্রাণ হয় খুব। এই আমের সুঘ্রানের সুখ্যাতি রয়েছে।
আরো পড়ুন: কুষ্টিয়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
এই সময়ে লক্ষণ ভোগ বা লখনা আমও পাওয়া যায়। এ আম পাকলে উজ্জ্বল হলুদ হয়। আর বোটার কাছে লালাভ রং ধরে। এর কারণে একে রঙিন আমও বলে। রাজশাহীতে লখনা পাওয়া যায়। এরপর উঠে হাড়িভাঙ্গা আম। এ জাতের আম রংপুর অঞ্চলে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো আম কোনটি?
দেশের উৎপাদিত আমের ২৫ শতাংশ আমই আমরুপালি জাতের । এক দশক আগেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় জাতের আম ছিল ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও গোপাল ভোগ ।কিন্তু এখন সেই স্থান দখল করেছে আমরুপালি জাতের আম।নওগাঁ, রাঙামাটি ,বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই চারটি জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে আমরুপালি জাতের আম।
সব আমের চেয়ে আম্রপালি আমের মিষ্টির মাত্রা বেশি। আর আম্রপালি জাতের আমের বৈশিষ্ট্য হলো এই জাতের আম অন্য জাতের আমের চাইতে বেশি দিন ভালো থাকে। সহজে পচেনা অর্থাৎ আমের মৌসুমে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য আমরুপালি জাতের আম পাওয়া যায়। এই সকল বোনের জন্যই আম্রপালি জাতের আম চাষ করে সবাই লাভবান হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।
ল্যাংড়া আম কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের সব জেলাতেই এই আম জন্মে। তবে চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও রাজশাহী এলাকায় ল্যাংড়া আম বেশি জন্মে। তবে সাতক্ষীরার ল্যাংড়া আম স্বাদ ও মানে উন্নত। ল্যাংড়া মধ্য মৌসুম জাত আম। আষাঢ় মাসের শেষ অবধি থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ল্যাংড়া আম বাজারে পাওয়া যায়।
বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ফল জন্মায়। তাই বাংলাদেশ মৌসুমী ফলের দেশ। আর শতকরা বেশিরভাগ উৎপাদিত ফলই বাজারে আসে মে- আগস্ট মাসের মধ্যে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭০ প্রজাতির ফলের চাষাবাদ হয়। এসব ফলের মধ্যে আম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফল ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থোকারি ফসল।
তারমধ্যে বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে আমাদের কমবেশি সবার জানা।বারোমাসি আমের উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো হল বারি আম ১,২ও বারি আম ৩ (আম্রপালি), বারি আম ৪(হাইব্রিড), বারিআম ৫,৬,৭,৮,৯,১০, বারি আম ১১(বারোমাসি) এবং বারি আম ১২(বারি জাত)। তবে আম উৎপাদন করে চাষাবাদে অধিক লাভ জনক হওয়ায় প্রতিবছরই সারাদেশে বাড়ছে আমের চাষ।
ক্রমবর্ধমান আমের চাহিদা মেটাতে আমের চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। হাজার হাজার জাতির আমের মধ্যে প্রতি বছর উচ্চফলনশীল জাত বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।বারোমাসি আমের জাত সমূহ মধ্যে বারি ১১ আমের জাতটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পাহাড়তলী চট্টগ্রাম হতে ২০১৫ সালে মুক্তায়িত হয়েছে। বারি জাত গুলোর মধ্যে কেবলমাত্র বারি ১১ জাতটি বারোমাসি হিসেবে সারাদেশে ফলন দিচ্ছে।
বারি ১১ উদ্ভাবনের পর থেকে সারাদেশে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে বারি এগারো নামক আমের জাতটির।বারি ১১ জাতের আম থোকায় থোকায় ধরে। দেশে বর্তমানে এ জাতের আমটি ঘিরে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর কলম বিক্রি করছেন। অনেকেই এ জাতের আমের বাগান করেছেন । লাগানোর পাঁচ ছয় মাসের মধ্যে প্রথম মুকুল আসে ।
তবে প্রথম মুকুল গুলো ভেঙ্গে ফেলাই ভালো।এ জাতের আম দেশের যে কোন জেলাতেই ফলন দেবে।কিছু কিছু জায়গায় বছরে দু বা তিনবার ও ফলন পাওয়া যাবে ।এ জাতের আম দেখতে লম্বাটে জাতটি উচ্চ ফলনশীল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত।বারোমাসি বারি আম ১১ বছরে তিনবার ফল প্রদান করে।
নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ -এপ্রিল , মে- জুন এবং জুলাই -আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়। গাছটির কোন অংশে মুকুল কিছু অংশে আমের গুটি কিছু অংশে কাঁচা আম আবার কোথাও কোথাও পাকা আম দেখা দেয় । এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত তবে একটু আশ আছে।
বাংলাদেশে আম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা কোনটি
বাংলাদেশে আম চাষে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা নওগাঁ হলেও আম উৎপাদনে প্রথম স্থান দখল করেছে। নওগাঁর বাগান গুলো নতুন হওয়ার কারণে এখানে আমের ফলন বেশি হয়। নবাবগঞ্জের চেয়ে নওগাঁ জেলায় এক লাখ টন আম বেশি উৎপাদন হয়।
আমের রাজা কোন আম
গ্রীষ্মকাল হচ্ছে ফলের মৌসুম। আর আম হচ্ছে জনপ্রিয় একটি রসালো ফল। এই ফলকে বলা হয় ফলের রাজা। তবে রাজা হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছে ফজলি আম। নানা জাতের আমের ভিতরে সম্প্রতি জি আই পণ্য হিসেবেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা ফজলি আমের স্বীকৃতি পেয়েছে।
ফজলি আমের বৈশিষ্ট্য গুলো হল: ফজলি আম দীর্ঘ ও ঈষৎ চ্যাপ্টা হয়। পাকা ফজলি আমের খোসা কিছুটা হলুদ হয়। ফজলি আম আশবিহীন রসালো সুগন্ধযুক্ত ও মিষ্টি হয়। খোসা পাতলা হয় ।আঁটি লম্বা পাতলা ও চ্যাপ্টা হয় ।আষার শ্রাবণ মাসে বা জুলাই মাসের শুরু থেকে ফজলি আম পাকে। আমের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ফজলি আম ব্যাপক জনপ্রিয়।
আমের জাত কয়টি?
বাংলাদেশ আমের প্রায় কয়েকশো জাত রয়েছে। প্রতিটি জাতের আমের চেহারা রং রূপ-ঘ্রাণ স্বাদ মিষ্টতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য আলাদা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় অনেক স্থানীয় জাতের আমের দেখা পাওয়া যাই। চিনি মিশ্রি, ক্ষিরভোগা ,চিনি ফজলি ,ফজলি, সুরমাই ফজলি,নাক ফজলি ইত্যাদি। এছাড়াও আরো বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে।
আম উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান কত
আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশে ৯৪ তম দেশ। তবে আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। প্রতিবছরই আমের উৎপাদন বাড়ছে। তাই বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে আম।
লেখকের মন্তব্য
উপরোক্ত আলোচনার সাপেক্ষে এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন বারোমাসি আমের জাত সমূহ সম্পর্কে এবং আম সম্পর্কে আরো নানা তথ্য। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আপনাকে এই পোস্টে বোঝাতে চেয়েছি আপনার কাঙ্খিত তথ্য সম্পর্কে।
আর্টিকেল টি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধবদের মাঝে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন। এই ধরনের পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url