ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কি জানার জন্য আগ্রহী। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আপনি সকল তথ্য জানতে পারবেন।এখানে ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে কি হয় সে সম্পকেও আলোচনা করা হয়েছে। সম্পুরন আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করছি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
পোস্টসূচীপত্রঃএই আর্টিকেলের শুধু ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়নি। এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন-ডি৩ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
ভূমিকা-ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
ভিটামিন-ডি৩ আমাদের শরীরের হাড় এবং কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যদি এই ভিটামিন মানুষের শরীরে হ্রাস পায় তবে এটি শিশুদের মধ্যে রিকেটস এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস রোগের কারণ হতে পারে। তাই এই ভিটামিনের যাতে ঘাটতি না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
ভিটামিন-ডি৩ কি
ভিটামিন-ডি৩ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করা পর্যন্ত বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সাথে এটি জড়িত। আমাদের দেহে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
আরো পড়ুন : রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি?
কিন্তু অনেক মানুষ এর কার্যকারিতা উৎস এবং ঘাটটির ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নয়। সুস্থ থাকতে এই ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।ভিটামিন ডি-৩ একটি Fat Soluble বা চর্বি দ্বারা দ্রবণীয় ভিটামিন যা মানব দেহে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং আমাদের দেহে হাড়ও পেশির সুস্থতা বজায় রাখে।
আমাদের ত্বক যখন সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে তখন অতি বেগুনি রশ্মি দ্বারা শরীর এই ভিটামিন তৈরি করতে পারে। এছাড়া ও এই ভিটামিন নির্দিষ্ট কিছু খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট থেকে ও পেতে পারি।ভিটামিন-ডি৩ এর কাজের ধরন এবং মানবদেহে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এর অবদানের কারণে এই ভিটামিনকে হরমোন বা প্রো- হরমোন হিসেবে ও বিবেচনা করা হয়।
ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
আমরা জানি ভিটামিন-ডি৩ আমাদের শরীরের জন্য অনেক পুষ্টিকর একটি উপাদান।যার ফলে ভিটামিন -ডি৩ প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন খাওয়া উচিত। আর এই ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল যে সকল মানুষের শরীরে ভিটামিন-ডি৩ এর ঘাটতি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন-ডি এর সকল উপাদান যেটি আমাদের দেহের হাড় এর ক্ষয় পূরণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন-ডি হলো সূর্যালোকের সাহায্যে কোলেস্টেরল থেকে সংশ্লেষিত মানুষের শরীরের মধ্যে একটি কার্যকরী ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন। অনেকে জানতে চাচ্ছেন ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সম্পর্কে।
ভিটামিন-ডি৩ ০-১২ বছরের শিশুদের জন্য নির্দেশিত নয়।ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম ১২-১৮ বছরের শিশুদের জন্য ভিটামিন-ডি৩ ঘাটতিজনিত চিকিৎসায় প্রতি ২ সপ্তাহে ২,০০,০০০ আই ইউ ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে হবে। আর ভিটামিন-ডি৩ ঘাটতি প্রতিরোধে প্রতি ৬ সপ্তাহে ২,০০,০০০ আই ইউ খেতে হবে।
যে সকল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিগনের ভিটামিন-ডি ক্যাপসুল ঘাটতি আছে তারা প্রতি সপ্তাহে ৪,০০,০০০ আই ইউ ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত খাবে। আর ভিটামিন-ডি৩ ঘাটটি প্রতিরোধে প্রতি ৪ সপ্তাহে ২,০০,০০০ আই ইউ করে সেবন করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এর মাত্রা কম বেশি করা যেতে পারে। অস্টিওপোরোসিস রোগীদের সহায়ক চিকিৎসায় প্রতি মাসে ২,০০,০০০ আই ইউ খেতে হবে।
ভিটামিন-ডি৩ পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণের মাধ্যমে মজবুত অস্থি ও দাঁত গঠন, রিকেটস, অস্টটিও মালেশিয়া , অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-ডি৩ গর্ভাবস্থায় প্রি- একলামশিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ এবং শিশুদের পুষ্টির জন্য স্তন্যদানকালে অতি প্রয়োজনীয়।
এই ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল যে সকল মায়েরা গর্ভাবস্থায় অথবা স্তন্যদানকালে রয়েছেন তাদের জন্য এই সময়টাতে ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়া অনেক জরুরী।তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার জন্য চিন্তা করবেন।
ভিটামিন-ডি৩ এর কাজ এবং উপকারিতা
আমরা সকলে জানি প্রতিটা ভিটামিন শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।তেমনি আমাদের দেহে ভিটামিন-ডি৩ এর কাজ এবং উপকারিতা অপরিসীম।যে সব মানুষ সূর্যালোকের সংস্পর্শে কম আসে এবং যাদের খাদ্যে ভিটামিন-ডি৩ এর ঘাটতি রয়েছে তাদের দেহে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দেখা যায়।তাই ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালো করে জানা জরুরী। ভিটামিন-ডি৩ আমাদের শরীরের অনেক কাজ করে থাকে। যেমন:
- হাড়, দাঁত এবং পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
- ত্বকের সুস্থতা ধরে রাখে।
- ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী।
- খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- এটি আমাদের মেজাজ, সামগ্রিক সুস্থতার ও উন্নতি করতে পারে।
ভিটামিন-ডি৩ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ভিটামিন-ডি৩ যেমন উপকার করে তেমনি অপকারও করে আপনি যদি ভিটামিন-ডি৩ উপকারের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন তবে আপনার ক্ষেত্রে কিছু ভিটামিন-ডি৩ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। সেই সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।যেমন:
- ক্ষুধামন্দা,অবসন্নতা
- বমি ও বমি বমি ভাব,
- ডায়রিয়া,
- মাথা ব্যথা,
- কোষ্ঠকাঠিন্য ,
- ওজন কমা ,
- বহুমূত্র ,
- অতিরিক্ত ঘাম,
- পিপাসা ,
- মাথা ঘোরা,
- প্লাজমা ও মূত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের অতিরিক্ত মাত্রা ইত্যাদি।
সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে কি হয়
যদিও ভিটামিন-ডি৩ এর ঘাটতি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা।তারপর ও ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।এই ভিটামিন এর অভাবের লক্ষণগুলির মধ্যে
- হাড়ের ব্যথা ।
- পেশির দুর্বলতা।
- ক্লান্তি ।
- বিষন্নতা ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ।
- ঘুম কম হওয়া ।
- অসময় দাঁত পড়ে যাওয়া।
- চুল পড়ে যাওয়া ।
- দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ।
- অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
গুরুতর ক্ষেত্রে ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে শিশুদের রিকেটস আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে অস্ট্রিওমেলসিয়া হতে পারে উভয় ক্ষেত্রেই হার দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
ভিটামিন-ডি৩ জাতীয় খাবার
আপনারা অনেকেই জানতে চান ভিটামিন-ডি৩ জাতীয় খাবার সম্পর্কে কোন কোন খাবার খেলে ভিটামিন-ডি৩ পাওয়া যায় সেই সকল খাবার সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আমাদের জেনে রাখা উচিত কোন খাবার গুলো খেলে ভিটামিন-ডি৩ পাওয়া যায় আর এই ভিটামিন-ডি৩ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারী সেটা তো ইতিপূর্বে জানতে পেরেছেন।
খুব কম খাবারে ভিটামিন-ডি৩ পাওয়া যায়। ভিটামিন-ডি৩ জাতীয় খাবারের মধ্যে মে সকল খাবারগুলো রয়েছে সেগুলো হল:
- ফ্যাটি ফিশ যেমন : টুনা, সেলমন ও সামুদ্রিক জাতীয় মাছ।
- ডিমের কুসুম ।
- দুধ ।
- কলিজা ।
- মাখন ।
- উন্নত প্রজাতির মাশরুম ।
- এছাড়া ভিটামিন-ডি৩ এর সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্য ।
- প্রতিদিন একটি কমলাও খেতে পারেন।
তাছাড়াও যেসব প্রাণী মাঠে থাকে এবং প্রচুর সূর্যালোক পায় সেসব প্রাণীর দুধ ,ডিম ,যকৃতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি৩ পাওয়া যায়।
ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ) ।
প্রশ্ন ভিটামিন-ডি ৩ দিনে কয়বার খাওয়া যাবে।
উত্তর ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম দিনে একবার।
প্রশ্ন ভিটামিন-ডি৩ কত দিন পর পর খাওয়া উচিত?
উত্তর ভিটামিন-ডি৩ ৪,০০,০০০ আই ইউ করে এক সপ্তাহ পর পর খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন ভিটামিন-ডি৩ কোন খাদ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়?
উত্তর ভিটামিন-ডি৩ সামুদ্রিক মাছের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ভিটামিন-ডি৩ এর অপর নাম কি?
উত্তর ভিটামিন-ডি৩ ক্যালিক্যালসিফারল।
প্রশ্ন ভিটামিন-ডি৩ কমে গেলে কি হয়?
উত্তর ভিটামিন-ডি৩ কমে গেলে যেসব সমস্যাগুলি হয় সেগুলো হলো:
- ক্লান্তি ।
- হাড়ের ব্যথা ।
- পেশি দুর্বলতা।
- বিষন্নতা ।
- দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা।
- চুল পড়ে যাওয়া ।
- অসময় দাঁত পড়ে যাওয়া ।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া।
লেখকের মন্তব্য
ভিটামিন-ডি৩ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইতিমধ্যে আমরা ভিটামিন-ডি৩ সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলের মাঝে আলোচনা করেছি। ভিটামিন-ডি৩ কি, ভিটামিন-ডি৩ এর কাজ এবং উপকারিতা,ভিটামিন-ডি৩ এর অভাবে কি হয়, ভিটামিন-ডি৩ জাতীয় খাবার কোনগুলো ভিটামিন-ডি৩ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন বিষয়ে গুলো সম্পর্কে জেনেছি।
আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে সকল বিষয়ে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন ।এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার কোন উপকারে আসে বা ভালো লাগে তবে আপনার বন্ধু বান্ধবী ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শেয়ার করবেন।
বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url