রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি?

রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে আপনি কি জানতে আগ্রহী, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা,এই আর্টিকেলের মধ্যে আজকে আমরা রাতকানা ( Night blindness )রোগ, কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয় এবং এর সাথে সম্পর্কিত সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করছি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি?
পোস্টসূচীপত্রঃএখানে শুধু রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় নাই। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ও আলোচনা করা হয়েছে। যা জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা-রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি?

আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা যা জানতে চেয়েছেন তা আমরা আজকের এই আর্টিকেল এর মধ্যে আলোচনা করতে চলেছি রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি? রাতকানা ( Night blindness )রোগ কি।আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো রাতকানা রোগ। চোখ আমাদের প্রতিটা মানুষের একটা অমূল্য সম্পদ। 

মোটকথা আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুবই দরকারি। তাই আমাদের নিজের প্রতি এবং নিজের শরীরের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে। দৈনন্দিন শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাইতে হবে। শরীরে যেন কোন ভিটামিনের ঘাটতি না হয়।

রাতকানা কি

রাতকানা হলো এমন একটি রোগ যা রাতে বা কম আলোতে দৃষ্টিশক্তির অবনতি হয় । এটি হলো ভিটামিন এ ( Vitamin -A ) এর অভাবজনিত কারণ কে চিহ্নিত করে। কারো কারো ক্ষেত্রে জন্ম থেকে এই সমস্যা থাকে, এছাড়াও চোখে আঘাত বা অপুষ্টির কারণে এই সমস্যা হতে পারে। 

রাতকানা রোগে স্বল্প আলো বা অন্ধকারে চোখের অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাস পায় বা নষ্ট হয়ে যায়। রাতকানার ইংরেজিতে এর আরেক নাম ( নাইট ব্লাইন্ডনেস ) Night blindness । এটি হলো প্রাথমিক চিকিৎসাগত উপসর্গ এবং রেটিনাল সিরামের মাত্রার স্বল্প তাকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে।

রাতকানা রোগের লক্ষণ

রাতকানা রোগের একমাত্র লক্ষণ অন্ধকারে বা মৃদু আলোতে কম দেখতে পাওয়া। যখন কোন উজ্জ্বল আলো থেকে কম আলোর দিকে তাকানো হয় তখন ঝাপসা লাগে সবকিছু । ভোর ও সন্ধ্যায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। 

ধীরে ধীরে চোখ শুকিয়ে যায়, চোখের সাদা অংশের চকচকে ভাবটা চলে গিয়ে চোখ কুঁচকে যায়। চোখে ছোট ছোট ছায় রঙের বুদবুদ ভর্তি দাগ দেখা দেয়। তারপর ধীরে ধীরে চোখের কর্নিয়া নরম হয়ে যায়, কর্নিয়াতে ঘা হয়। কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়।অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়।

রাতকানা রোগের কারণ

আপনারা কি রাতকানা রোগের কারণ কি তা জানতে চাছেন।তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।রাতকানা রোগের প্রধান কারণ হলো ভিটামিন এ এর অভাব। এটি রেটিনাইটিস পিগমেনটোস নামক একটি রোগ যার ফলে বড় কোষ ধীরে ধীরে আলোর প্রতি সারা দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

রাতকানা এক ধরনের জেনেটিক রোগ যা ধীরে ধীরে রাত্রিকালীন দৃষ্টির পাশাপাশি দিনের বেলা দেখার ক্ষমতা ও নষ্ট করে দেয়।রাত্রিকালীন অন্ধকারের ফলে জন্ম পর থেকেই রড কোষ কাজ করে না ,যা অল্প পরিমাণ কাজ করে।ধীরে ধীরে এটা আরো খারাপ হতে থাকে।রাতকানা রোগের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো রেটিনল বা ভিটামিন এ এর অভাব। 

ডায়রিয়া ,হাম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের কারণে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। আর এই ভিটামিনের অভাবে ও রাতকানা রোগ হয়। জন্ম কালীন সময়ে বাচ্চার ওজন কম হলে ,বাড়ন্ত বয়সে শরীরে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে এবং অপুষ্টিতে ভোগার ফলে ও এই রোগ হয়ে থাকে।

রাতকানা রোগের প্রতিকার

আপনারা কি জানেন রাতকানা রোগের প্রতিকার এর জন্য কোন ভিটামিন খেতে হয়।ভিটামিন এ হলো রাতকানা রোগের প্রতিকারক ভিটামিন।তাই রাতকানা রোগের প্রতিকার এ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য সবুজ শাকসবজি এবং রঙিন ফল ও সবজি এবং মলা ঢেলা মাছ খেতে হবে।জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক কারণে যদি হয় রাতকানা তা আটকানো সম্ভব না।


তবে আপনি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং রাতকানা রোগ কম হওয়ার জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও ও আপনার রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমাতে এমন খাবারগুলো গ্রহণ করুন যাতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ রয়েছে।প্রতিদিন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

যেমন-গারো সবুজ শাক যেমন -কচু শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, মূলা শাক ইত্যাদি। হলুদ সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া ও গাজর ইত্যাদি। হলুদ ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি।প্রাণীজ জাতীয় খাদ্য বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ, ডিমের কুসুম ,কলিজা ,ছোট মাছ ইত্যাদি।শাকসবজি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে।

তেল দিয়ে রান্না করে খেলে ভিটামিন- এ বেশি পাওয়া যায়।বাড়ির আঙিনায় শাক সবজি চাষ করে আমরা সহজে ভিটামিন -এ এর চাহিদা মেটাতে পারি। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ বেশি দামের খাদ্য যেমন-মাছ ,কলিজা ,ডিম ,দুধ ,মাখন প্রভৃতি কিনতে পারেনা।

কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়

আপনি জানেন কি কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়।তাহলে চলুন জেনে নেই সেই ভিটামিন এর নাম।ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। ভিটামিন এ এর অভাবে প্রতিদিন প্রায় ৮৮টি শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভিটামিন- এ এর অভাবে রাতকানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এক থেকে ছয় বছর বয়সী প্রায় ২ শতাংশ শিশু।আবার ভিটামিন-এ এর অভাবে শরীরের চামড়া অনেকটা ব্যাঙের চামড়ার মত হয়ে যায়। মাথার চুল ঝরে পড়ে।

রাতকানা রোগের স্থায়ী সমাধান কি

রাতকানা রোগের স্থায়ী সমাধান রয়েছে।রাতকানা থেকে মুক্তি পাওয়ার স্থায়ী সমাধান ল্যাসিক পদ্ধতিতে লেজার প্রযুক্তির ব্যবহার।

রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা কি

আসুন এবার জেনে নেই রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎস কি? রাতকানা রোগের নিরাময়ের জন্য ২,০০,০০০ আই ইউ ভিটামিন এ ৩ দিন সেবন করতে হবে। তারপর ৫০,০০০ আই ইউ ভিটামিন এ পরবর্তী ১৪ দিন অথবা ১-৪ সপ্তাহ পর পর্যায়ক্রমে একটি বাড়তি ডোজ নেওয়ার মাধ্যমে এই রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা করে রোগটির সম্পূর্ণ নিরাময় করা হয়। 

যারা ভিটামিন এ সেবন করতে পারেন না তাদের জন্য পেশীতে ভিটামিন এ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই রোগের প্রতিরোধের জন্য চোখের ড্রপ ব্যবহারে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায় না।তাই আমরা অবহেলা না করে ডাক্তারি পরামর্শ মত ভিটামিন এ ক্যাপসুল সেবন করব।

রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন : রাতকানা রোগের অপর নাম কি?
উত্তর: রাতকানা রোগের অপর নাম হল নিকটালোপিয়া (Nyctalopia).
প্রশ্ন : কত বছর বয়স থেকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া যাবে?
উত্তর: ৬ মাস বয়স থেকে।
প্রশ্ন: কত বয়স পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সব বয়সের মানুষ খেতে পারবে।
প্রশ্ন :কম খরচে ভিটামিন এ কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তর: বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষ করলে সহজে ভিটামিন -এ এর চাহিদা মেটাতে পারবো।

লেখকের মন্তব্য

রাতকানা ( Night blindness )রোগের চিকিৎসা এবং রাতকানা রোগের সাথে সম্পৃক্ত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আশা করি সমস্ত আর্টিকেল টি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে সকল বিষয় বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। 

এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন। আর পোস্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিগ স্টার ইনফর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url